Advertisement

লক্ষ্মীপুরে সড়কের পাশের গাছ যেন বিজ্ঞাপনের খুঁটি

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

গাছে পেরেক ঠুকে টাঙানো হয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ফেস্টুন। গতকাল দুপুরে রায়পুর শহরের বালিকা বিদ্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো
গাছে পেরেক ঠুকে টাঙানো হয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ফেস্টুন। গতকাল দুপুরে রায়পুর শহরের বালিকা বিদ্যালয়ের সামনেছবি: প্রথম আলো

অর্ধশত বছর বয়সী তিনটি রেইনট্রিগাছ। তিনটি গাছই ছেয়ে আছে ব্যানার-ফেস্টুনে। গাছের বুকে পেরেক ঠুকে টাঙানো হয়েছে এসব ব্যানার–ফেস্টুন। এর অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন নেতার নামে টাঙানো। সম্প্রতি এ দৃশ্য চোখে পেড়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহরের বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে।

সেখান থেকে অদূরে পৌর শহরের ল্যাংড়া বাজার এলাকায় থাকা দুটি রেইনট্রিগাছেও প্রায় একই দৃশ্য দেখা যায়। কেবল এসব গাছ নয়, লক্ষ্মীপুর জেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায় সড়কের পাশে গাছে গাছে পেরেক ঠুকে এভাবেই প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অথচ পেরেক ঠোকার কারণে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিও তৈরি হয়।

গাছের পেরেকে মরিচা ধরলে সেই জায়গায় ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের সুযোগ পায়। এতে গাছ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সময়ের আগেই শুকিয়ে যেতে পারে।
অধ্যাপক আবদুল আহাদ, বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ

সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে এবং সড়কর পাশে থাকা গাছগুলোতেই মূলত ব্যানার-ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। অনেক ব্যানার-ফেস্টুন তুলে নেওয়ার পরও পেরেক রয়ে গেছে গাছে।

রায়পুর পৌর শহরের কথা হয় স্কুলশিক্ষক সেলিম মুন্সীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পৌর শহরের রেইনট্রিগাছগুলোতে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হচ্ছে। নির্বাচনের আগে তো ব্যানার-ফেস্টুনের জন্য গাছই দেখা যায় না। গাছ থেকে ব্যানার-ফেস্টুন সরলেও ঠুকে দেওয়া পেরেক আর তোলা হয় না।

সবুজ বাংলাদেশ নামে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহিন আলম বলেন, গাছে পেরেক মেরে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রচারণা চালানো মোটেই উচিত কাজ নয়। এতে গাছের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা মিঠুন চন্দ্র দাস বলেন, গাছ কাটা কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত করার বিরুদ্ধে দেশে স্পষ্ট আইন রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিধিমালাতেও রাস্তার ধারের গাছ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। এসব আইন অমান্য করলে জরিমানা ও কারাদণ্ড দেওয়া যায়।

গাছে ফেস্টুন টাঙিয়ে প্রচারণা বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কর্মী হয়তো না বুঝে ব্যানার ঝুলিয়েছে। আমরা দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের কাজ করতে নিরুৎসাহিত করি। প্রয়োজনে বিকল্প জায়গায় ব্যানার-ফেস্টুন টানানোর ব্যবস্থা করা উচিত।’

জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘গাছে পেরেক মেরে প্রচারণা চালানো কোনো রাজনৈতিক দলেরই উচিত নয়। পরিবেশ রক্ষা সবার দায়িত্ব। এসব বিষয়ে জামায়াত সচেতন রয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবদুল আহাদ বলেন, ‘গাছের পেরেকে মরিচা ধরলে সেই জায়গায় ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের সুযোগ পায়। এতে গাছ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সময়ের আগেই শুকিয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া গাছের কাণ্ডে পেরেক ঠুকলে গাছের জাইলেম ও ফ্লোয়েম নামে অভ্যন্তরীণ নালিকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলোর মাধ্যমেই গাছ খাবার ও পানি পরিবহন করে। ফলে গাছ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে, রাস্তার দুই পাশের ক্ষতিগ্রস্ত গাছ ঝড়বৃষ্টিতে সহজে ভেঙে পড়তে পারে, যা জনসুরক্ষার জন্যও হুমকি।’

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমারও বিষয়টি নজরে এসেছে। পৌর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতাদের এসব অপসারণের জন্য বলা হয়েছে। গাছে পেরেক মেরে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। খুব শিগগির জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা হবে এবং প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Lading . . .