চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেন শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন ৯ শিক্ষার্থী। প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দাবিতে আমরণ অনশন শুরুর প্রায় ৫২ ঘণ্টা পর তাঁরা অনশন ভাঙলেন। আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্য তাঁদের আগামী রোববার বিকেলে বৈঠকে দাবির বিষয়ে আলোচনা করার আশ্বাস দিলে তাঁরা অনশন ভাঙেন। এর আগে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা অনশন শুরু করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে হওয়া এই অনশন কর্মসূচিতে ছিলেন বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া, শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির, সাংগঠনিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা, রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ, দপ্তর সম্পাদক নাইম শাহজাহান, নারী অঙ্গনের সংগঠক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ-সমর্থিত) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা। এর মধ্যে জশদ জাকির বুধবার বেলা তিনটার দিকে যুক্ত হয়েছিলেন। বাকিরা দুপুর ১২টায়।
প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ ছাড়া অনশনরত শিক্ষার্থীদের অন্য দাবির মধ্যে ছিল গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের মানসম্মত চিকিৎসার নিশ্চয়তা, ক্যাম্পাসে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হামলার ভিডিও প্রকাশকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন।
অনশন ভাঙার সময় উপাচার্য ছাড়াও সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান, ছাত্র উপদেষ্টা মো. আনোয়ার হোসেন ও সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা রোববার তিনটার দিকে ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসব। তাদের যেসব দাবিদাওয়া রয়েছে, সেগুলো আমাদের দিয়েছে। রোববার আমরা এই দাবিগুলো সমাধান করব। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি হবে না।’
অনশন ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যে সাত দফা দাবি দিয়েছি প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। এ আস্থা রেখেই আমরা আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছি। যদি বৈঠক হয়, তাহলে আমরা প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিকে কেন্দ্রে রেখে বাকিগুলো নিয়ে আলোচনা করব। যদি দাবি না মেনে হয়, তাহলে আমরা আরও জোরালো আন্দোলনের দিকে যাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পানিজাতীয় খাবারের মাধ্যমে তাদের খাবার খাওয়ানো শুরু করব। কারণ, তারা ৫২ ঘণ্টা ধরে অনশনে ছিল। আপাতত আমরা তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
উল্লেখ্য, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করেন ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’।
এদিকে অনশন কর্মসূচির সাত দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম নগরের প্রেসক্লাব ও ষোলো শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে। চট্টগ্রাম শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ করেন।