Advertisement

বাঁকখালী নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযানে বিক্ষোভ, ফিরে গেল যৌথ বাহিনী

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে নির্মিত অবৈধ ঘরবাড়ির উচ্ছেদ ঠেকাতে দখলদার লোকজন খননযন্ত্র ঘিরে বিক্ষোভ করেন। আজ দুপুরে নদীর পেশকারপাড়া অংশেছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে নির্মিত অবৈধ ঘরবাড়ির উচ্ছেদ ঠেকাতে দখলদার লোকজন খননযন্ত্র ঘিরে বিক্ষোভ করেন। আজ দুপুরে নদীর পেশকারপাড়া অংশেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের সময় আবারও স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেছেন। তৃতীয় দিনের মতো আজ বুধবার বেলা ১১টায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে বাঁকখালী নদীতীরের ঘরবাড়ির কয়েক শ বাসিন্দা বাধা সৃষ্টি করেন। বিকেলে আবারও উচ্ছেদে গেলে বাসিন্দারা খননযন্ত্র ঘিরে বিক্ষোভ করেন। পরে বাধার মুখে ফিরে যায় যৌথ বাহিনী।

গত ২৪ আগস্ট বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে চার মাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন নৌপরিবহন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর গত সোমবার বিআইডব্লিউটিএর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী এই অভিযান শুরু করে।

গত দুই দিনে নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৪৩টি পাকা ও আধা পাকা ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা উচ্ছেদে ৫৬ একর জমি দখলমুক্ত করে যৌথ বাহিনী। তবে দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার থেকেই বাধার মুখে পড়েছিল উচ্ছেদ অভিযান। সেদিন ইটের আঘাতে এক পুলিশ সদস্যের মাথা ফেটে গেলেও অভিযান বন্ধ হয়নি।

পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যৌথ বাহিনী শহরের পেশকারপাড়া অংশে অভিযানে নামে। সেখানে নদীর তলদেশ ভরাট করে নির্মাণ করা শতাধিক পাকা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি রয়েছে। একাধিক খননযন্ত্র নিয়ে ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে কয়েক শ নারী–পুরুষ বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় উচ্ছেদ অভিযানের খননযন্ত্র ঘিরে ধরে অভিযান বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাতে থাকেন তাঁরা। কয়েকজন মাটিতেও শুয়ে পড়েন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা যদি পাহাড়ের আশ্রয়শিবিরে বছরের পর বছর থাকতে পারে, আমরা বাংলাদেশি ভূমিহীনদের কী অপরাধ। পুনর্বাসন ছাড়া আমাদের উচ্ছেদ করা অন্যায় হবে।’

এ সময় কয়েকজন জমির দলিল দেখিয়ে বলতে থাকেন, নদীর জমি হলেও তাঁরা রেজিস্ট্রি করে কিনে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন। জমির বিপরীতে খতিয়ানও খুলেছেন, দিচ্ছেন নিয়মিত খাজনা। সরকারের নির্দেশে খতিয়ানভুক্ত এই জমি থেকে কাউকে উচ্ছেদ করতে হলে আলাপ–আলোচনা করতে হবে। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

বেলা আড়াইটার দিকে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা নদীর নতুন সেতু এলাকা ও কস্তুরাঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গেলে সেখানেও বাধার মুখে পড়ে। এ সময় বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। বিকেল চারটার দিকে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে ফিরে যায় যৌথ বাহিনী। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

যৌথ বাহিনীর কর্মকর্তারা বসে পরবর্তী সময়ে উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেবেন জানিয়ে ঘটনাস্থলে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন শাখা) কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘বাধার মুখে চলে যাচ্ছি। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হবে না। শহরের নুনিয়াছটা থেকে খুরুশকুল সেতু পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারে নদীর জমি দখল ও ভরাট করে যেসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, তার সবটুকু উচ্ছেদ করা হবে। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।’

বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাঁকখালী নদীতীরের ৭২১ একর জমিকে নদীবন্দর ঘোষণা করে সরকার। জেলা প্রশাসনকে এই জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নানা কারণে এত দিন দখলমুক্ত করা যায়নি।

বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ১ সেপ্টেম্বর উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।

Lading . . .