Advertisement

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দিলেন সেই বিএনপি নেতা

যুগান্তর

প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

চাঁদা দাবির সংবাদ প্রকাশের জেরে যুগান্তর পত্রিকার বিজয়নগর উপজেলা প্রতিনিধি এসএম কামরুল হাসান শান্তর বিরুদ্ধে উলটো ৫০ লাখ টাকার মানহানি ও চাঁদাবাজির মামলা করেছেন সেই বিএনপি নেতা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে বিএনপি নেতা আব্দুল হকের কথোপকথন ফাঁস, ‘আওয়ামী লীগ নেতার কাছে চাঁদা দাবি’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্ববর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট বিজয়নগর আদালতে মামলাটি করেন।

মামলায় দৈনিক যুগান্তর বিজয়নগর উপজেলা প্রতিনিধি এসএম কামরুল হাসান শান্ত ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছাইট গ্রামের জানু মিয়ার ছেলে ইয়াসিন মাহমুদ ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম অলি আহমেদকে আসামি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির ওসিকে মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তিনি পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। এ মামলায় অভিযুক্ত এসএম কামরুল ইসলাম শান্ত যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক, ইয়াছিন মাহমুদও সাংবাদিক এবং এম এ অলি আহাম্মদ পাহাড়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন লোকের সঙ্গে ফোনে কথোপকথন রেকর্ড করে বিএনপির নেতাদের ক্ষতি করার জন্য মিথ্যা রিপোর্ট করেন।

ওই সাংবাদিকরা তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। চাঁদা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট করেছেন। এতে তার কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার মানহানি হয়েছে।

এদিকে, পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের একাধিক মামলা থেকে বাঁচানোর আশ্বাস দিয়েছেন। সম্প্রতি একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম অলি আহমদের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

অডিওতে বিএনপি নেতা দাবি করেন, জেলা-উপজেলার নেতারা পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছিল। আমি বলেছি, তার ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব যাচ্ছে। আপাতত, দুই লাখ দিয়ে তার নামটি কেটে দিন।

এ আওয়ামী লীগ নেতাকে দেওয়া অন্য আরেক ভয়েস রেকর্ডে বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়- তোমাকে যে বলছিলাম তিনটা মামলা পেন্ডিং হয়ে রয়েছে; তারা (জেলা-উপজলার নেতা) আমাকে ফোন দিচ্ছে যাওয়ার জন্য- উবায়দুল মোকতাদির সাহেব এক নাম্বার আর তোমাকে চাচ্ছে দুই নাম্বার আসামি দিতে। আমার কাছে ৫ লাখ চাইছিল, আমি বলছি ৫ লাখ দিতে পারবে না- এ মুহূর্তে তার ব্যবসা নাই। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আছে। আমি কোনোরকম দুই লাখ ব্যবস্থা করে নিয়ে দিমু আপনাদের কাছে। ওকে মামলায় ফালাইলে একটু সমস্যা হয়। সে আমার আত্মীয় হয়। আমি এসব কথাবার্তা বলে তাদের মানিয়ে রাখছি। ঠিক আছে- এ সপ্তাহের ভেতরে যেটা করার করতে হবে। যত রকমের কষ্টই হয় তুমি এটা তাড়াতাড়ি করে জোগাড় করো। পঁচা শামুকে পা কাটা ঠিক না। তিনটা মামলা একসঙ্গে হবে। সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি পুরো বিজয়নগর ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন সহকারে জানানো হবে। তুমি এটা ত্বরিত গতিতে করবা। যত ধরনের কষ্ট হোক, তুমি এটা কর। এটা তোমার ভালোর জন্য বলছি। একবার এগুলোর মধ্যে জড়ালে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েও বাঁচতে পারবা না। তুমি নিজে জ্ঞানী মানুষ। চিন্তাভাবনা করে কাজ গুলো কর। আমি চাই না তোমার কোনো ক্ষতি হোক।

ওই কথোপকথন নিয়ে যুগান্তর পত্রিকায় ২৯ আগস্ট অনলাইনে ‘মামলা থেকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগ নেতার কাছে বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি’ শিরোনামে এবং ৩০ আগস্ট যুগান্তর পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ‘কথোপকথন ফাঁস: আওয়ামী লীগ নেতার কাছে বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সংবাদটি জেলা বিএনপির নজরে এলে ৩০ আগস্ট পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল এবং সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।

সংবাদের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক বাদী হয়ে মঙ্গলবার ২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের বিজয়নগের আদালতের সাংবাদিক এসএম কামরুল হাসান শান্তসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানহানি ও চাঁদাদাবির একটি মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

দৈনিক যুগান্তর বিজয়নগর উপজেলা প্রতিনিধি এসএম কামরুল হাসান শান্ত জানান, বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম অলি আহমদের মধ্যে ৮ মিনিটের একটি কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে উভয়পক্ষের বক্তব্যে স্বীকারোক্তি পাওয়ায় দৈনিক যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে সংবাদ প্রকাশ করার নীতিমালায় কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি।

তিনি বলেন, আমরা ওই নেতার বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করেছি- এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা কথোপকথনের ভয়েজটি পাওয়ার পর শুধু ফোনে উনার বক্তব্য নিয়েছি। তার কল রেকর্ডও আমাদের কাছে আছে। উনার সঙ্গে আমাদের কোনো খারাপ সর্ম্পক নেই। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে নিউজ করেছি। তারপরেও এ বিষয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন সাংবাদিকতার গলা চেপে ধরার মতো ঘটনা মনে করি।

আরও পড়ুন

Lading . . .