Advertisement

৩০ হাজার টাকায় অন্যের জেল খাটতে আসেন তিনি

যুগান্তর

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আসামি জোবাইদ পুতিয়া (বামে) ও নকল আসামি নুর মোহাম্মদ (ডানে)
আসামি জোবাইদ পুতিয়া (বামে) ও নকল আসামি নুর মোহাম্মদ (ডানে)

কুমিল্লায় ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্যের জেল খাটতে এসে ফিঙ্গারপ্রিন্টে ধরা পড়েছেন নুর মোহাম্মদ নামের এক যুবক। মাদক মামলায় অন্য আসামির কারাভোগ করতে আসেন ওই যুবক।

কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ আঙুলের ছাপ নিতেই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার দুপুরে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আব্দুল্লাহিল আল-আমিন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

প্রতারক নুর মোহাম্মদ (৩৩) কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ফকির আহাম্মদের ছেলে। প্রকৃত আসামি জোবাইদ পুতিয়া একই পৌরসভার নাইট্যংপাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।

কুমিল্লা আদালত ও কারাসূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার একটি মাদক মামলায় জোবাইদ পুতিয়া নামের মাদক ব্যবসায়ীকে কারাগারে পাঠান আদালত। এরপর ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সে কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি নিয়ে নিয়মিত হাজিরা দিতেন।

পরে অভিযোগপত্র দাখিলসহ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ২০১৮ সালে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে জোবাইদ পুতিয়া পলাতক থাকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

এরপর চলতি বছরের ১২ আগস্ট কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী এএইচএম আবাদের মাধ্যমে জোবাইদ পুতিয়া পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এক ব্যক্তি। আগে থেকেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত।

পরে তাকে কুমিল্লা কারাগারে আনার পরদিন (১৩ আগস্ট) বিপত্তি দেখা দেয়। আগে জেল খাটা আসামি জোবাইদ পুতিয়ার ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে অমিল দেখা যায় নতুন করে আসা ব্যক্তির। এ সময় মামলার এজাহারে থাকা আসামির নাম-ঠিকানা ও প্রদত্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে নতুন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায় তার নাম নুর মোহাম্মদ। মূল আসামি জোবাইদ পুতিয়ার বাবা-মায়ের নাম-ঠিকানার সঙ্গে তার মিল নেই। পরে কারা কর্তৃপক্ষ ওই দিনই বিষয়টি আদালতে লিখিতভাবে জানান।

তবে এ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর)।

এ বিষয়ে আইনজীবী এএইচএম আবাদ বলেন, এটা আদালতের সঙ্গে প্রতারণা। তাকে শাস্তির আওতায় আনা দরকার। আত্মসমর্পণের দিন আমি তার নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি জুবাইদ পুতিয়া বলেন। তার কাছে জাতীয় পরিচয় চাওয়ার পর তিনি জানিয়েছেন প্রবাস থেকে আসায় তাৎক্ষণিকভাবে সঙ্গে নেই, পরে দেবেন; কিন্তু কারাগারে যাওয়ার পর তিনি ধরা পড়েন। বিষয়টি জানার পর আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।

আইনজীবী এএইচএম আবাদের সহকারী শ্রীমন্ত বলেন, সুমন নামের পরিচিত এক ব্যক্তি নুর মোহাম্মদকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। এরপর আমি তাকে স্যারের (এএইচএম আবাদ) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আব্দুল্লাহিল আল-আমিন বলেন, কারাগারে আসামি এলে আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই। এই আসামির ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার পর দেখি, মূল আসামি জোবাইদ পুতিয়ার সঙ্গে মিল নেই। পরে বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে জানানো হয়। তবে আদালত থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। বর্তমানে নুর মোহাম্মদ কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুর মোহাম্মদ জানান, ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫ দিনে মুক্তির আশ্বাসে তিনি জেল খাটতে এসেছেন।

আরও পড়ুন

Lading . . .