Advertisement

জন্মের পর সন্তানকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান দম্পতি, অতঃপর

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

নবজাতকপ্রতীকী ছবি: আনস্প্ল্যাশ
নবজাতকপ্রতীকী ছবি: আনস্প্ল্যাশ

চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্মের পর কন্যাসন্তানকে রেখে পালিয়ে যান এক দম্পতি। টানা ১৬ দিন শিশুটির পরিবারের কোনো খোঁজ না পেয়ে শেষমেশ পুলিশের সহায়তা নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ ওই দম্পতির ঠিকানা খুঁজে বের করে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসে। আজ বুধবার বিকেলে পুলিশের উপস্থিতিতে সন্তানকে বুকে তুলে নেন মা। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট এলাকার এশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক রিদুয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠায় চিকিৎসকেরা ছাড়পত্র দেন। কিন্তু মা-বাবার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য অন্য মায়েদের সাহায্য নেওয়া হয়।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার এক সিএনজি অটোরিকশাচালক স্ত্রীকে ১৮ জুলাই এশিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করান। সেদিন রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁদের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। শিশুটি জন্মের পর অসুস্থ থাকায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) রাখা হয়। চার দিন পর ২২ জুলাই মাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার টাকার বিলের মধ্যে তাঁরা ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এরপর নবজাতককে হাসপাতালে রেখেই পালিয়ে যান তাঁরা।

পরবর্তী সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ১ আগস্ট চকবাজার থানায় লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির বাবা-মায়ের রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ার ঠিকানায় গিয়ে তাঁদের খুঁজে বের করে পুলিশ। পরে পরিবারের জন্য গাড়িভাড়া দিয়ে চট্টগ্রামে আনা হয়।

ওসি বলেন, ১৯ দিনে হাসপাতালের মোট বিল হয়েছিল ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। পরিবারের পক্ষে এই টাকা পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না বলে তাঁরা হাসপাতালে যেতে ভয় পেয়েছিলেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে এক ব্যক্তি বিলের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা দেন। বাকি বিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মওকুফ করে দেয়।

হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন শিশুটির মা, নানি ও নানা। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, সামর্থ্য না থাকায় তাঁরা কোনোভাবেই খরচ মেটাতে পারছিলেন না। কোথাও সাহায্যও পাননি। বিল কমানো বা মওকুফ করার সুযোগ আছে, তা জানতেন না।

শিশুটির মা বলেন, ‘প্রতিদিন কেঁদেছি। মেয়েকে ফেলে থাকতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু টাকা না থাকায় আসতে পারিনি।’

শিশুটির বাবা এ দিন হাসপাতালে আসেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্ত্রীর অস্ত্রোপচারে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এরপর আর কোনো টাকা ছিল না। তাই হাসপাতালে যাইনি।’

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন বলেন, গরিব রোগীদের ক্ষেত্রে বিল যতটা সম্ভব মওকুফ করা হয়। আগে জানালে এ ক্ষেত্রেও তা করা হতো।

Lading . . .