চোখের সামনেই নদীতে বিলীন হয় রঞ্জিতের বসতভিটাসহ শ্মশান
প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫

বসতভিটাসহ পারিবারিক শ্মশানও বিলীন হয়েছে চাঁদপুরের পুরানবাজারের হরিসভা এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত চন্দ্র নন্দীর।
তিনি বলেন, একসময় আমাদের সব ছিল এখানে। মেঘনা নদীর ভাঙনে সব শেষ হয়ে গেছে। আমরা ১৫টি পরিবার থাকতাম একসঙ্গে। সবার বসতভিটাসহ পারিবারিক শ্মশান সবই নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর যে যার মতো নানা প্রান্তে চলে যায়। আমি এখানে মাটি ভাড়া বাবদ বসবাস করছি।
ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা কামনা নন্দী বলেন, ওই যে দূরে জাহাজটা মেঘনা নদীতে যেখানে বেঁধে রাখা হয়েছে, ওখানেই এক সময় সব ছিল আমাদের। এখন কিছুই নেই। স্বামীর বাড়ি হওয়ায় এই নদীর পাড়ে এখন একচিলতে মাটি ভাড়া নিয়ে টিনের ঘর করে বসবাস করছি। কেউ এসে খোঁজও নেয় না কেমন আছি। জানি না কখন আবার এটাও ভেঙে নিয়ে যায় মেঘনা নদীর থাবা।
বাসিন্দা বিশাখা নন্দী বলেন, এখানে আমরা কয়েকটি পরিবার থাকলেও আতঙ্কে থাকি। এই বুঝি সব নদীতে বিলীন হয়ে গেল। অনেকেই যার যার মতো সুবিধাজনক স্থানে চলে গেছে। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। তাই এখানেই নদী পাড়ে কোনোমতে টিকে আছি।
হরিসভা এলাকার রুবেল হরিজন জানান, এখানে বিশাল খেলার মাঠ ছিল আমরা খেলতাম। এখন সব নদীতে তলিয়ে গেছে। কেউই আমাদের দুঃখের কথা তুলে ধরে না।
ব্যবসায়ী গোপাল সাহা বলেন, মেরামত বা সংস্কার নয়; বরং টেকসই মজবুত স্থায়ী শহর রক্ষা বাঁধ প্রয়োজন আমাদের। তাহলেই এখানকার মানুষের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, ইমারতসহ সাড়ে ৫ লক্ষাধিক মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
নতুন বাজার ও পুরানবাজার এলাকায় প্রায় ৩ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় চলছে চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ। যেখানে একযোগে ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮২৭ কোটি টাকার কাজ চলমান রেখেছে। তবে বর্তমানে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিবৃষ্টির কারণে বাঁধের টিলাবাড়ি, যমুনা ঘাট, হরিসভা, রোনাগোয়াল ও নতুনবাজারের ডাকাতিয়া নদীর পাড়সহ ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসহ বাঁধের সর্বমোট ১০৯ মিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চাঁদপুরের নতুন বাজার, পুরানবাজার শহর রক্ষা বাঁধের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৩৬০ মিটার। ১৯৭২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পে মোট ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ বাঁধ নির্মাণে কাজ করেছে সরকার। বর্তমানে ৮২৭ কোটি টাকার বাঁধ পুনর্বাসন কাজটি ৬০০ কোটি টাকা চুক্তিতে এগিয়ে চলছে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের মে মাসে শহর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়ে এর ১৮ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে পুরো কাজ ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ তবে ব্লক ম্যানুফ্যাকচারিং চলছে।
তিনি বলেন, ডাকাতিয়া নদীর ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার এলাকায় সদরের ইসলামপুর গাছতলা, রগুনাথপুর, গুনরাজদী, মৈশাদীসহ বেশ কিছু স্থান চিহ্নিত করেও ভাঙন ঠেকাতে কিছু কাজ করা হয়েছে। আশা করছি, ঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা গেলে মানুষের ভাঙন আতঙ্ক ও হতাশা কেটে যাবে।