কুমিল্লায় এলজিইডির ৪০ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

কুমিল্লায় নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে এলজিইডির আওতাভুক্ত ৪০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন।
অভিযোগ রয়েছে, কালো তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্ত। নানা অনিয়মের সঙ্গেও তারা জড়িত রয়েছে। তাছাড়া বেশ কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রেখে জনভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এতে জনসাধারণের দুর্ভোগের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের বিধিমালা ভঙ্গ হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন বহু ঠিকাদার নিয়মনীতি মানছে না। নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে নিুমানের সামগ্রী। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এমন নানা অনিয়মে জড়িত ৪০টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মাঝে এসব প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। শুধু আর্থিক জরিমানা নয়, অপরাধ বিবেচনায় শাস্তি হিসাবে চলমান কাজ বাতিল এবং কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের চিন্তা করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এলজিইডি সূত্র বলছে, এই জরিমানা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা এবং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আর সচেতন মহল বলছে, অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে পুরোনো ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।
কালো তালিকাভুক্ত এবং আর্থিক জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আসা উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মেসার্স এমএ ইঞ্জিনিয়ারিংকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৫৩১ টাকা, ফরিদপুর জান্নাত কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪, মেসার্স পাইওনিয়ার কনস্ট্রাকশনকে ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৪, গ্রিন-এমকেকে ১৬ লাখ ১ হাজার ১৩৯, মেসার্স মাইশা বিল্ডার্সকে ১০ লাখ ৪ হাজার ৭২৪, এমএএম ফিলামেন্টকে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮১৮, মেসার্স মদিনা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেসার্স ল্যান্ড মার্ক বিল্ডার্স নামে যৌথ প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬০, মেসার্স ফাতেমা ট্রেডার্স ও মেসার্স পলি এন্টারপ্রাইজ নামে যৌথ প্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮০ এবং মেসার্স হাই অ্যান্ড কোম্পানিকে ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৩৪৮ টাকাসহ মোট ৪০টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা কোটবাড়ির রাজারখোলা থেকে শ্রীবিদ্যা হয়ে বড়ধর্মপুর সড়ক। সাড়ে ৮ হাজার ৪৪০ মিটার সড়কটি সংস্কার করছে যৌথভাবে মেসার্স মদিনা কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স ল্যান্ড মার্ক বিল্ডার্স। পাঁচ বছর সময় অতিক্রম হয়ে গেলেও এখনো কাজটি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও কাজে ধীরগতির কারণে উলটো ভোগান্তি বেড়েছে। নিুমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে এই দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কোটবাড়ি শ্রীবিদ্যার বাসিন্দা হুমায়ুন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ পতনের পর নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেই পালিয়ে যায় দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইটের কংক্রিট ফেলে কাজ শেষ না করায় টানা বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। গর্ত ও খানাখন্দ হয়েছে। পাঁচ বছর যাবত সংস্কার চলমান থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
কুমিল্লা এলজিইডির সিনিয়র প্রকৌশলী আশরাফ জামিল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অধিকাংশ ঠিকাদার আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে। নিুমানের সামগ্রী ব্যবহার, নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আমরা ৪০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ব্ল্যাক লিস্ট করেছি। প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনভোগান্তি অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের লাইসেন্স বাতিলসহ বিধি মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।