প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে গুরুতর আহত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদের চেতনা ফিরেছে। সাত দিন পর গত শনিবার তার চেতনা ফেরে। ইমতিয়াজের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে, একই সংঘর্ষে আহত সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের অবস্থারও ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। গতকাল রোববার বিকেলে পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. এ টি এম রেজাউল করিম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, ‘শনিবার সোয়া ১১টার দিকে মেডিকেল বোর্ড বসে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো সবকিছু যাচাই করেছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা থাকা অবস্থায় ইমতিয়াজ আহমেদের লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলা হয়। লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ভালোই রেসপন্স করছে। মা-বাবার সঙ্গে হালকা কথাবার্তা বলেছে। মা-বাবা ও ভাইকে চেনে বলেছে। আজ (গতকাল) দুপুর আড়াইটায় আবার মেডিকেল বোর্ড বসে। সে (ইমতিয়াজ) এখন স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। তার জ্ঞানের মাত্রা এখন ১৪-১৫ আছে। আজ মেডিকেল বোর্ডের সবার সঙ্গে কথা বলেছে। তাকে আমরা আরও কয়েকদিন আইসিইউতে রাখব।’
চিকিৎসাধীন আরেক চবি শিক্ষার্থী মামুনের অবস্থারও ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানান পার্কভিউ হাসপাতালের এমডি। তিনি বলেন, ‘শনিবার সে (মামুন) একটু একটু করে হেঁটেছে। তবে তার খুলি প্রতিস্থাপন করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।’
মামুনের হাঁটার ছবি নিয়ে বিতর্ক: সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন সুস্থ হয়ে গেছেন—এমনটি উল্লেখ করে শনিবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, মামুন হাসপাতালের করিডোরে হাঁটছেন আরেকজনের কাঁধে ভর দিয়ে। হাত উঁচু করে আছেন—এমন কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয় সমালোচনা। মামুনের ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেন চবির প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান। বর্তমানে তিনি রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে মামুনকে জোর করে সুস্থ দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বজন ও সহপাঠীরা।
মামুনের ভাই মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, ‘মামুনের হাঁটার কয়েকটা ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। একটায় দেখা যায়, সে হাত উঁচু করে আছে। মনে হচ্ছে সে ভাষণ দিচ্ছে।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, সে কি এখন ওই পরিস্থিতিতে আছে?
ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গতকালের (শনিবার) চেয়ে আজ (রোববার) কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে। ইশারায় কথা বলার চেষ্টা করেছে। কলম দিয়ে লিখেও বোঝানোর চেষ্টা করেছে।’
তবে মামুনকে হাঁটানোর বিষয়টি চিকিৎসারই অংশ বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডা. এ টি এম রেজাউল করিম বলেন, ‘মামুনকে যিনি অপারেশন করেছেন, তিনি হাঁটিয়ে, বসিয়ে, দাঁড় করিয়েসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক উপস্থিত হন। তিনি ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছেন। এ ধরনের রোগী হাঁটছে, এটা তো খুশিরই খবর।’
গত ৩১ আগস্ট দুপুরে সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমতিয়াজ ও মামুন মাথায় গুরুতর জখম পান। রাতেই অস্ত্রোপচারের পর তাদের লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরে বুধবার বিকেল মামুনকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। ইমতিয়াজ এখনো আইসিইউতে রয়েছেন।
গত ৩০ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর ফটক এলাকায় এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারশর বেশি শিক্ষার্থী আহত হন বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে স্থানীয়দের দাবি, তাদের ৩০ জনের মতো আহত হয়েছে।