Advertisement

ঋণ চেয়ে পাননি দোকানি, পরে মিলল লাশ

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

শংকর সাহাছবি: পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া
শংকর সাহাছবি: পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ঋণ না পেয়ে হিড বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কার্যালয়ে বিষপান করেছেন এক দোকানি। তাঁর নাম শংকর সাহা (৪০)। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় হাতিয়ার ওছখালিতে এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে হাতিয়া থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করা লাশ ময়নাতদন্তের জন্য আজ মঙ্গলবার সকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহত শংকর সাহা উপজেলার ৫ নম্বর চর ঈশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম শচীন্দ্র সাহা। তিনি ওছখালী বাজারের একজন চা ও মনিহারি পণ্যের দোকানি ছিলেন।

নিহত শংকর সাহার ভাই উত্তম সাহা অভিযোগ করেন, গত বছর হিড বাংলাদেশ সংস্থার কাছ থেকে তাঁর ভাই ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে যথাসময়ে তা পরিশোধ করেছেন। এরপর তাঁকে পুনরায় ঋণ দেবে বলে আশ্বস্ত করায় সোমবার বিকেলে তাঁর ভাই হিড বাংলাদেশ সংস্থার কার্যালয়ে যান। সেখানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে সন্ধ্যায় হিড সংস্থার কার্যালয় থেকে তাঁকে ফোন করে জানানো হয় তাঁর ভাই বিষ খেয়েছেন। একইভাবে তাঁর ভাইয়ের ছেলে হৃদয় সাহাকেও ঘটনাটি জানানো হয়। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

হিড বাংলাদেশ সংস্থার হাতিয়ার শাখার ব্যবস্থা মো. কাউসার আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, শংকর সাহা আগের ঋণের দুটি কিস্তি তিন-চার দিন আগে পরিশোধ করেছেন। এরপর গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি পুনরায় দুই লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য কার্যালয়ে আসন। তখন তিনি তাঁর (শংকর সাহা) হিসাবের বই পরীক্ষা করে লেনদেন ভালো না হওয়ায় পুনরায় ঋণ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।

মো. কাউছার জানান, ঋণ দেওয়া হবে না বলার পর শংকর সাহা সংস্থার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকের কক্ষে যান। সেখানে ব্যবস্থাপক একটি সভায় ব্যস্ত থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি। তখন তিনি বেরিয়ে সংস্থার টয়লেটে ঢোকেন। বেশ কিছুক্ষণ পরও তিনি টয়লেট থেকে বের হচ্ছিলেন না। এরই মধ্যে তাঁর বমি করার শব্দ শোনা যায়। সংস্থার লোকজন টয়লেটের দরজা ভেঙে দেখেন, শংকর সাহা পড়ে আছেন, পাশে বিষের বোতল। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি সংস্থা হিড বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আগের ঋণ পরিশোধ করার পর আবার ঋণ চাইলে শংকর সাহাকে অপমান করেন। তখন শংকর টয়লেটে গিয়ে বিষ পান করেন। পরে অসুস্থ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পর সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ওসি জানান, নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে আজ সকালে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পরিবার যদি লিখিত অন্য কোনো অভিযোগ করেন সে আলোকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি শুনেছেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে হিড বাংলাদেশের একটি সমঝোতা হয়েছে। সেটি কি বিস্তারিত জানেন না।

জানতে চাইলে হিড বাংলাদেশের শাখা ব্যবস্থাপক মো. কাউছার প্রথম আলোকে বলেন, নিহত গ্রাহক শংকর সাহার ছেলেকে সংস্থার পিয়ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। তিনি যে দোকান চালাতেন, সেটি সচল করতে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হবে বলে সংস্থার তরফ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি তাঁর পরিবার মেনে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিহত শংকর সাহার ভাই উত্তম সাহা প্রথম আলোকে বলেন, নগদ সহায়তা হিসেবে পরিবারকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে এনজিও থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ভাইয়ের ছেলে হৃদয় সাহাকে (২১) চাকরিও দেবেন বলে জানিয়েছেন।

Lading . . .