Advertisement

চট্টগ্রামে ডিসি কার্যালয়ের সামনে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে শতাধিক শিক্ষার্থীর মানববন্ধন

কালবেলা

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থীর মানববন্ধন। ছবি : কালবেলা
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থীর মানববন্ধন। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ‘জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র সমাজ, চট্টগ্রাম’ ব্যানারে জড়ো হন শতাধিক শিক্ষার্থী।

এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। তারা ‘ছাত্র-জনবান্ধব ডিসি ফরিদা খানমকে ফিরিয়ে আনো’, ‘অর্থের বিনিময়ে ডিসি নিয়োগ বন্ধ করো’, ‘আমরা ছাত্র, আমরা চট্টগ্রামের কল্যাণ চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা একে একে বক্তব্য দেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহুল ইসলাম বলেন, ‘ফরিদা খানম ছিলেন ছাত্রদের অভিভাবকের মতো। আমরা যে কোনো সমস্যায় তার কাছে যেতাম, তিনি শুনতেন এবং সমাধান দিতেন। তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে সরানো হয়েছে। আমরা মেনে নেব না।’

চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী সায়েম আবদুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম শিক্ষা নগরী। এখানে প্রতিদিন হাজারো ছাত্র বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে। ফরিদা খানম আমাদের পাশে ছিলেন। তাকে সরানো মানে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ।’

একই মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নারী ডিসি হিসেবে ফরিদা খানম শুধু একজন প্রশাসক ছিলেন না, বরং নারীদের জন্যও ছিলেন অনুপ্রেরণা। মেয়েদের সমস্যা তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন। তাদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন।

এর আগে চট্টগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল বশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানকে সরিয়ে দিয়ে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দায়িত্বে আসেন নতুন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম। প্রথমবারের মতো একজন নারী ডিসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ, বিশেষত নারী সমাজের মধ্যে তৈরি হয়েছিল নতুন এক আশাবাদ। নারীরা মনে করেছিলেন, এ নিয়োগ তাদের জন্যও নতুন সুযোগ ও কাজের ক্ষেত্র তৈরি করবে।

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ফরিদা খানম তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তার লক্ষ্য ছিল— চট্টগ্রামকে একটি সৌন্দর্যমণ্ডিত ও নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তোলা। তিনি প্রতিটি উপজেলা ও গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনেছেন, গণশুনানির আয়োজন করাসহ সরকারি খাসজমি দখলমুক্ত করে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার উপযোগী করেছেন। এতে সরকার রাজস্ব আয় বাড়াতে সক্ষম হন।

এর বাইরে ফরিদা খানমের কার্যকালে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গা দখলমুক্ত করা হয়। তিনি কঠোরভাবে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এবং সরকারি জমিকে পুনরুদ্ধার করে জনস্বার্থে ব্যবহার নিশ্চিত করেন। এতে জনগণের আস্থা যেমন বেড়েছিল, তেমনি প্রশাসনের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছিল।

কিন্তু হঠাৎ করেই ২০২৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলির আদেশ জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়—চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে উপসচিব হিসেবে বদলি করা হলো। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।

এমন খবরে চট্টগ্রামের ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তারা মনে করেন, ফরিদা খানম যখন চট্টগ্রামকে গোছানো ও নিরাপদ শহরে রূপান্তরের চেষ্টা করছিলেন, তখন তাকে সরিয়ে দেওয়া হলো। তারা এটিকে রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির ফল হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

Lading . . .