উখিয়ায় আবারও শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ, লাঠিচার্জের পর ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ
প্রকাশ: ২০ আগস্ট, ২০২৫

কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাকেন্দ্র (লার্নিংসেন্টার) থেকে চাকরি হারানো শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের সমন্বয়ক (প্রতিনিধি) জিনিয়া শারমিন, শিক্ষক নেতা সাইদুল ইসলাম, সুজন রানা, আবু ইমরান, তারেকুর রহমান, সাকিব হাসান, ঊর্মি আক্তারসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ এলাকার ফলিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। আশ্রয়শিবিরের চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা সকাল সাতটায় উখিয়া ডিগ্রি কলেজ এলাকায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান সড়কের পাশাপাশি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢোকার বিভিন্ন সংযোগ সড়ক বন্ধ করে দেন তাঁরা। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়কের এক পাশে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলেন তাঁরা। এ সময় যানজট সৃষ্টি হলে আশ্রয়শিবিরে কর্মরত এনজিওকর্মীদের গাড়ি আটকে যায়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ শুরু করে। তাতে অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হন। আহত ব্যক্তিদের উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে, সেখানে তাঁদের দেখতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজার প্রতিনিধি জিনিয়া শারমিন রিয়াসহ কয়েকজন। এ সময় পুলিশ জিনিয়াসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বেলা দুইটা পর্যন্ত জিনিয়াসহ শিক্ষকেরা থানায় পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। তাঁদের মুক্তির দাবিতে থানার সামনের সড়কে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়কের এক পাশে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলেন তাঁরা। এ সময় যানজট সৃষ্টি হলে আশ্রয়শিবিরে কর্মরত এনজিওকর্মীদের গাড়ি আটকে যায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ শুরু করে। তাতে অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হন। আহত ব্যক্তিদের উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে, সেখানে তাঁদের দেখতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজার প্রতিনিধি জিনিয়া শারমিন রিয়াসহ কয়েকজন। এ সময় পুলিশ জিনিয়াসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বেলা দুইটা পর্যন্ত জিনিয়াসহ শিক্ষকেরা থানায় পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। তাঁদের মুক্তির দাবিতে থানার সামনে সড়কে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারী এক নারী শিক্ষক বলেন, ‘যাঁদের আটক করা হয়েছে, অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসাইনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ফলিয়াপাড়া রাস্তার মোড়ে ৪০-৫০ জন শিক্ষক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন। তাতে জনদুর্ভোগ বাড়তে থাকে। পুলিশ জনদুর্ভোগ দূর করতে অবরোধ তুলে নিতে বলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুলিশের প্রতি উসকানিমূলক বক্তব্য নিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, 'সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। আন্দোলনকারী কয়েকজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত সোমবার কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার কোটবাজার এলাকায় টানা সাড়ে নয় ঘণ্টা (সকাল সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত) সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষকেরা। সে সময় কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়েছিল। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তৈরি হয়েছিল। সড়ক অবরোধের কারণে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোতে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার গাড়িও ক্যাম্পে ঢুকতে পারেনি।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা জানান, ‘তহবিল-সংকটের অজুহাতে এক হাজারের বেশি শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাতে রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়া যেমন বন্ধ হয়ে গেছে, তেমনি শিক্ষকেরাও আর্থিকভাবে দুর্দশায় পড়েছেন। চাকরিতে পুনর্বহালের আশ্বাস দিয়ে বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো আবার চালু করা হয়েছিল। এখন আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।’
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় চার হাজার শিক্ষাকেন্দ্রে আড়াই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরকে পাঠদান করা হয়। সেখানে ছাঁটাইয়ের মুখে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষকেরা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, তহবিল-সংকটের কারণে আশ্রয়শিবিরের ১ হাজার ১৭৯ জন স্থানীয় (বাংলাদেশি) শিক্ষকের চাকরির চুক্তি শেষ হয়। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে আশ্রয়শিবিরের সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ৩ জুলাই শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এক মাসের মধ্যে ইউনিসেফ তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে শিক্ষকদের চাকরিতে পুনর্বহালের চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এখনো তহবিল সংগৃহীত হয়নি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন আরও বলেন, চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়া শিক্ষকদের বিষয়টি সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে আশ্রয়শিবিরে ১৫০টি শিক্ষাকেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে চাকরি হারানো শিক্ষকদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হবে। ৭ আগস্ট আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তার পরও রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর কোনো কারণ নেই।