Advertisement

ঋণগ্রহীতাকে বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ হীড বাংলাদেশের বিরুদ্ধে

যুগান্তর

প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ছবি: যুগান্তর
ছবি: যুগান্তর

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় ঘটে যাওয়া একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা যেন মানুষের অন্তরে ক্ষোভ ও বিরহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। একদিকে অপমানিত, অন্যদিকে ঋণের দায়ে জর্জরিত এক দিনমজুরের জীবন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল, আর তার মৃত্যু যেন পুরো সমাজের কাছে এক নিষ্ঠুরতার ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শংকর সাহা, ৪০, চরঈশ্বর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দুই সন্তানের জনক। ৮-৯ মাস আগে হীড বাংলাদেশ-এর ওছখালি শাখা থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সাড়ে ১২ শতাংশ সুদে নেওয়া ঋণের কিস্তি নিয়মিত শোধ করার পর তাকে নতুন ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যখন তিনি সেই ঋণ পরিশোধের পর অফিসে গিয়ে আবার নতুন ঋণের জন্য আশা নিয়ে পৌঁছান, তখন তাকে শুধু ঋণই দেয়া হয়নি, বরং অপমানের শিকার হতে হয়। তার সেই অপমানিত মনে বড়ি হয়ে উঠেছিল অভিমানের কষা লাথি। আর তার পরই ঘটে সেই বিভীষিকাময় ঘটনাটি, যা তার জীবনকে শেষ করে দেয়।

নিহত শংকরের স্ত্রী রিংকু সাহা জানান, ‘ওইদিন বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে অফিস থেকে ফোন আসে—শংকর বিষ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আমার স্বামী যে বিষ খেয়েছে, এটা তার পেটে বিষ ঢালা নয়, বরং এক ধরনের হত্যা।’ এক চরম ক্ষোভে তিনি আরও বলেন, ‘এনজিও অফিসে গিয়ে তাকে ঋণ না দিয়ে বিষ খাওয়ানো হয়েছে, এমনকি ফোনে জানানো হয় যে তিনি বিষ খেয়েছেন, কারণ শংকরের জীবন তাদের ঋণের দুঃসহ বোঝায় ছিল।’

এনজিও কর্তৃপক্ষ অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হীড বাংলাদেশের এরিয়া ম্যানেজার অলক কুমার হালদার বলেন, ‘শংকর নিজেই বিষপান করেছিলেন। তার আত্মীয় আমাদের জানায় যে তিনি ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না। অফিসে আসার আগেই বিষ খেয়েছিলেন, আর এরপর বাথরুমে গিয়ে বমি শুরু হলে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমাদের অফিসে এমন কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।’

কিন্তু শংকরের পরিবারের কাছে এই দাবি এক মিথ্যাচারের গল্পের মতো মনে হচ্ছে। তাদের ভাষায়, ‘ওই অফিসে তাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। আমাদের চোখের সামনে এত বড় নিষ্ঠুরতা ঘটেছে।’

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ ওমর ফারুক বলেন, ‘শংকরের পেট থেকে বিষ বের করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ইঁদুরনাশক জাতীয় বিষ খেয়েছিলেন, এবং সেই বিষই তার মৃত্যুর কারণ।’ তবে সব কিছুই এখন ময়নাতদন্তের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে।

হাতিয়া থানার ওসি একেএম আজমল হুদা জানিয়েছেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানার পর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই ঘটনা যেন এক পীড়াদায়ক কাহিনী হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ঋণগ্রহীতার ক্ষোভ, অপমান ও হতাশার শেষ পরিণতি বিষাক্ত মৃত্যুতে এসে পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে—এটি কি শুধুমাত্র একটি আত্মহত্যার ঘটনা, নাকি এটি বাস্তবে এক নির্মম হত্যাকাণ্ড, যা সমাজের সঠিক মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করছে? হাতিয়ার জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে, তাদের মনে ন্যায়বিচারের দাবির ঝড় উঠেছে।

আরও পড়ুন

Lading . . .