Advertisement

ওভালে স্বপ্নসন্ধানী ভারত

এই সময়

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

দুরন্ত সেঞ্চুরী যশস্বী জয়সওয়ালের,ছবি সৌজন্যে এক্স
দুরন্ত সেঞ্চুরী যশস্বী জয়সওয়ালের,ছবি সৌজন্যে এক্স

সব্যসাচী সরকার

‘সব ভালো যার শেষ ভালো!’ বাংলার এই বহুচর্চিত প্রবাদবাক্য শুবমান গিলের জেন জ়ি–র কাছে আজ রূপকথা হয়ে দেখা দেবে কি না, সময় বলবে। তবে কোনও সন্দেহ নেই, ঐতিহাসিক ওভালে অবশ্যই স্বপ্নসন্ধানী শুবমানের ভারত। এখনও ম্যাচের দু’দিন বাকি। ভারতের লিড ৩০০ ছাড়িয়ে আরও বেড়েই চলেছে। ওভালের অতীত রেকর্ড বলছে, চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নজির ১৯০২ সালে। সে বার ২৬৩ তাড়া করে এক উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড। এ তো গেল গত শতাব্দীর কথা। সাম্প্রতিক ইতিহাসে সেরা নজির গত বছর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের ২১৯ তাড়া করে জয়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত ইতিহাসের কচকচির কী প্রয়োজন? প্রয়োজন কারণ লিডসে প্রথম টেস্টে ৩৭১ রান তাড়া করে জিতে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। এখানে ভারতের পক্ষে সুবিধে বলতে লিডসের মতো পাটা উইকেট নয়। তবে তৃতীয় দিনের উইকেট যা আচরণ করেছে, রিকি পন্টিং বলছেন, ‘উইকেটের বাউন্স আছে ঠিকই, কিন্তু বাজ়বল জমানায় ইংল্যান্ড ব্লক করার ক্রিকেট খেলবে না। ৩৭৫ থেকে ৪০০ রান যথেষ্ট হওয়া উচিত। কারণ এখন স্পিনারদের বলে কোনও কার্যকারিতা দেখছি না। সেটা থাকলে ৩২০–৩২৫ নিশ্চিত বলা যেত।’

যে যাই বলুন, স্বপ্ন ছুঁতে চাওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে শুবমানের ভারত। সানি গাভাসকরের এক সিরিজ়ে ৭৭৪ রানের রেকর্ড হয়তো ভাঙা হলো না, কিন্তু ভারতের ক্যাপ্টেনের জন্য সেরা সার্টিফিকেটটা সানিরই, ‘আমি যখন করেছিলাম, বেবি অফ দ্য টিম ছিলাম। সে ভাবে কোনও দায়িত্ব ছিল না। কিন্তু ক্যাপ্টেন্সি মাথায় রাখলে নতুন একটা টিমকে শুবমান যে ভাবে গাইড করেছে, ওর জন্য হ্যাটস অফ।’

এই যে ভারত ওলি পোপ অ্যান্ড কোংয়ের নাকের উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছে, সেটা কী ভাবে সম্ভব হলো? এর পিছনে দুটো নাম। মুম্বইয়ের টেন্টে রাত কাটানো বাঁ হাতি যশস্বী জয়সোয়াল (১৬৪ বলে ১১৮, ২ ছক্কা, ১৪ চার) ও এক সময়ে ক্রিকেট ছেড়ে দিয়ে কলকাতার ক্লাব ক্রিকেট থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বিহারের আকাশ দীপ। নাইটওয়াচম্যান বা নৈশপ্রহরী শব্দটা এখন আর ক্রিকেটে বহুচর্চিত নয়। তার বদলে চলে এসেছে নাইট–হক! অর্থাৎ বাজপাখির মতো যে পড়ন্ত বেলায় টিমকে রক্ষা করবে।

সেই কাজটা তো করলেনই, বাংলার আকাশ দীপ ওভালে জ্বেলে দিলেন ঐতিহাসিক দীপ। ৯৪ বলে ৬৬ রানের ইনিংস সব ধরনের ফর্ম্যাট মিলিয়ে কেরিয়ারের সেরা তো বটেই, এক কথায় অভাবনীয়। বার্মিংহামের এজবাস্টনে দশ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হওয়ার পরে আকাশ একটা কথা বলেছিলেন, ‘একদিন না একদিন ব্যাটেও টিমের হয়ে কিছু একটা অন্তত করতে চাই।’ কিছু করতে চাওয়াটা যে এ ভাবে টিমকে নিরাপদ ব্যালকনিতে পৌঁছে দেবে, গৌতম গম্ভীরের পক্ষেও ভাবা সম্ভব ছিল কি না, সন্দেহ।উল্টো দিকে ভারতের তরুণ প্রজন্মের প্রতীক অকুতোভয় যশস্বী। ইংল্যান্ড শর্ট বলের চেষ্টা করেছে, বীরুর স্টাইলে চমৎকার সব আপারকাট মেরেছেন যশস্বী। মুখে তীব্র কাঠিন্য, সঙ্গে মুম্বই ঘরানার হার মানা মনোভাব। শুবমানের মতো হয়তো সিরিজ়ে ৭৫৪ রান নেই। কিন্তু ওভালে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলা এই ১১৮, চলতি সিরিজ়ের অন্যতম সেরা ইনিংস হয়ে থাকবে। যা সিরিজ়ে ভারত সমতা ফেরাক বা না ফেরাক।

যশস্বী ও আকাশ দীপের শৌর্যে কী করে ভুলে যাবেন রবীন্দ্র জাডেজাকে? দায়িত্ববোধ এবং সংকল্প ঠিক কাকে বলে ৩৬ বছর বয়সি এই ক্রিকেটারকে দেখে শিখতে হয়। ম্যানচেস্টারে ম্যাচ বাঁচানো সেঞ্চুরির পরে এখানে আবার লিডটাকে একাই বাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন জাডেজা।

এতে অবশ্য তাঁর কাজ শেষ হচ্ছে না। এখনও ম্যাচের দু’দিন বাকি। রোমাঞ্চকর থ্রিলারের সব রকমের মশলা মজুত। কারণ বেন স্টোকস জমানায় ইংল্যান্ড কেঁদে কঁকিয়ে হারে বিশ্বাস করে না। ‘হয় মারবো, নয় মরবো,’ এটাই বাজ়বল। ওভালের পিচ মোটেও আনপ্লেয়েবল মনে হচ্ছে না। সে জন্য কত রানের লিড চাই, তা নিশ্চিত করে বলতে রাজি হচ্ছেন না কোনও বিশেষজ্ঞই। এর মধ্যে ফের ট্র্যাজেডি করুণ নায়ার। দ্বিতীয় ইনিংসে আর একটা ৫০, তাঁকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা দিতে পারত। ১৭ করে যে ভাবে কট বিহাইন্ড হলেন, তাতে এর পরে ফের টেস্টে সুযোগ পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

কী দাঁড়াচ্ছে? সিট বেল্ট বেঁধে বসুন। রবিবারের দুপুরে টেস্ট ম্যাচ ক্রিকেটের যাবতীয় রোমাঞ্চ উপভোগ করুন। শুধু অহেতুক ভবিষ্যদ্বাণী করবেন না। শুধু অনিশ্চয়তাটা উপভোগ করুন। অ্যাডভান্টেজ ভারতই। তবে ক্রিকেট অনিশ্চিত বলেই এত সুন্দর।

আরও পড়ুন

Lading . . .