ক্রীড়া উপদেষ্টার মতবিনিময়ে বিসিবি সভাপতি, উঠলো নানা প্রশ্ন
প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসাব করলে হয়তো একমাসও বাকি নেই। নবগঠিত নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করলেও যতদূর জানা গেছে আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে বিসিবি নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে যাবে। ৪ অক্টোবর সম্ভাব্য দিনক্ষণের কথাও শোনা যাচ্ছে ক্রিকেট পাড়ায়।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আর জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বোর্ড সভাপতি পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন এবং এই নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে অনেক রকমের খবর প্রায় প্রতিদিন মিডিয়ায় আসছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলছে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনা রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। এক. কে বা কারা বিসিবির বর্তমান সভাতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে সভাপতি পদে নির্বাচন না করার কথা বলা হয়েছে। সেটাকে হুমকি ধরে আমিনুল ইসলাম বুলবুল একজন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী চেয়ে আবেদন করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
পাশাপাশি সাবেক বিসিবি সভাপতি এবং বিএনপি নেতা আলী আসগর লবি তামিম ইকবালকে বিএনপির প্রার্থী এবং আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী বলে অভিহিত করেন।
মোটকথা, বিসিবি নির্বাচন নিয়ে ক্রিকেট পাড়া তোলপাড়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো মুখরোচক ঘটনা ঘটছে। তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করছে।
এই যখন অবস্থা, ঠিক তখনই হঠাৎ গতকাল (৭ সেপ্টেম্বর) জানানো হলো, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে বসতে চান। দেশের জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিকদের সাথে ক্রীড়াঙ্গনের নানান বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করতে চান।
যে কথা সেই কাজ। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কনফারেন্স হলে যথারীতি সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে এলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিব নজরুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আজাদ মজুমদার এবং ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি মাহফুজ আলম ভূঁইয়া।
সাথে আরও একজন; আমিনুল ইসলাম বুলবুল। দেশের ক্রিকেটের এক বিশাল নাম। অনেক বড় তারকা। তার নেতৃত্বেই ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ।
সেই সাথে দেশের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ানও তিনি। আর সর্বোপরি বর্তমান বিসিবিপ্রধান। কিন্তু ক্রীড়া উপদেষ্টার সাথে ক্রীড়া সাংবাদিকদের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি কেন? অনেকের চোখেই তাকে অনাহুত মনে হলো।

প্রশ্নও উঠলো, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার আজকের এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আমিনুল ইসলাম বুলবুল কেন? তবে কি এটা ক্রীড়া উপদেষ্টার মতো বিনিময়ের অন্তরালে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নির্বাচনী প্রচার কিংবা ‘শো ডাউন?’ সাংবাদিকদের মতবিনিময়ের কথা বলে কি তবে বুলবুলের বন্দনা গাইবেন ক্রীড়া উপদেষ্টা?
এমন প্রশ্ন উদ্রেক ঘটলো; কিন্তু ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজে এবং পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালন করা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আজাদ মজুমদার সাংবাদিকদের তা পরিষ্কার করলেন।
তারা জানিয়ে দিলেন আজকের এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের উপস্থিতির সাথে বিসিবি নির্বাচন, বুলবুলের প্রচারণার কোনো সম্পর্ক নেই। দেশের অন্যতম দুই ক্রীড়া ফেডারেশন ফুটবল ও ক্রিকেটের প্রধান হিসেবে এখানে আমন্ত্রিত ছিলেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ও বিসিবিপ্রধান আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
তাবিথ আউয়াল দেশের বাইরে থাকার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। বুলবুল এসেছেন। তবে মূলতঃ এটা ক্রীড়া উপদেষ্টারই মতবিনিময় অনুষ্ঠান। এখানে বিসিবি এবং বুলবুলের প্রচারণা নিয়ে কোনো কথা ওঠার প্রশ্নই আসে না। উঠবেও না। বাস্তবে উঠেওনি। বুলবুলও জানিয়ে দিলেন আমি এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আপনাদের (সাংবাদিকদের) বিরাগভাজন হয়ে থাকলে দুঃখিত। আমি আমার নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো কথাই এখানে বলবো না। কারণ এটা নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চও নয়।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়, এ অনুষ্ঠানে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নির্বাচনী প্রচারণা বহুদূরে, তাকে নিয়ে একটি কথাও বলার কোনো কারণ নেই। কারণ তিনি এনএসসি বা সরকারের প্রার্থী নন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ (আজাদ মজুমদার) ব্যাখ্যা করেন, বিসিবি নির্বাচন নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝির উপক্রম হয়েছে। কেউ কেউ এটাকে সরাসরি বিসিবি সভাপতি নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন। বাস্তবে এটা হলো বিসিবি পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন। পরিচালক নির্বাচিত হলেই না কেবল সভাপতি পদে নির্বাচনের প্রসঙ্গ। তাই আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও তামিম ইকবাল বিসিবির সভাপতি পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন, কথাটা ঠিক নয়। বলতে হবে তারা পরিচালক পদে নির্বাচক করছেন। পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর সভাপতি নির্বাচন করার প্রশ্ন আসবে।
পাশাপাশি তামিম বিএনপির প্রার্থী আর বুলবুল বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রার্থী- একথাও ঠিক নয় বলে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিসিবি নির্বাচন তো আর জাতীয় নির্বাচন নয় যে রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি অংশগ্রহণ থাকছে। এখানে বিএনপির প্যানেল থাকলে তো জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও প্যানেল থাকতে পারে। ব্যাপারটা এমন নয়। তামিম বিএনপি প্রার্থী আর বুলবুল বর্তমান সরকারের প্রার্থী, একথাও ঠিক নয়।