Advertisement

‘আমার হাতে কিছু নেই, এটা বিসিবির বিষয়, এই মুহূর্তে আমি উন্মুক্ত’

ঢাকা পোস্ট

প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

২৮ দিনের চুক্তিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন জুলিয়ান উড। জাতীয় দলের বাইরে নারী ও বয়সভিত্তিক দলকেও কোচিং করিয়েছেন ইংলিশ এই পাওয়ার হিটিং কোচ। অল্প সময়ের ব্যবধানে ক্রিকেটারদের মন জয় করলেও নতুন করে তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজই (বুধবার)।

এরপরই ইংল্যান্ড ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে গেল প্রায় এক মাসের অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন জুলিয়ান উড।

বাংলাদেশে এলেন, জাতীয় দল ছাড়াও বয়সভিত্তিক দল নিয়েও কাজ করলেন। সবমিলিয়ে কেমন লাগল?

উড: দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হলো, ৪ সপ্তাহের মতো। প্রথম ৫ দিন মেয়েদের সঙ্গে কাজ ছিল, যেটা চমৎকার ছিল। খুবই প্রতিভাবান আর পরিশ্রমী দল। এরপর পুরুষ দলে এলাম। খুবই উদার মানসিকতা ছিল আমাদের পুরোটা সময়। পরিসংখ্যান যদি দেখেন, বড় তিনটা দল ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ড তারা বাংলাদেশ বা অন্য যে কোনো দলের চেয়ে এগিয়ে।

আমার কাজ ছিল, এই দুই পর্যায়ের মধ্যকার পার্থক্য কমিয়ে আনা। আর আমরা সেটাই করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি আর তার ফলাফল আপনারা পারফরম্যান্সেই দেখতে পাবেন। এ ছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে কাজ হলো তাদের ইংল্যান্ড সফরের আগমুহূর্তে। সেটাও অসাধারণ ছিল।

নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের কেমন দেখলেন?

উড: দারুণ দক্ষতাসম্পন্ন। তাদের ব্যাটিংয়ের প্রাথমিক শিক্ষাটা ভালো ছিল। যেটা আমার কাজকে সহজ করেছে। আমার কাজ ছিল তাদের শেখার ওপর নতুন কিছু তৈরি করা। তাদের দক্ষতা ছিল, আমাদের সেশন তাদের রান করার ক্ষেত্রগুলো আরও বাড়িয়ে দেবে। মূলত, তাদের মানসিকতা নিয়ে কাজ করেছি। ইতিবাচক মানসিকতা তৈরির প্রচেষ্টাই ছিল। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি আপনার ইতিবাচক মানসিকতা থাকে, তবে মুভমেন্টও পজিটিভ হবে।

অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গেও কাজ করলেন তাদের মধ্যে আলাদা করে কাউকে চোখে পড়েছে কি না...

উড: যুবা দল, যেমন বললাম খুব ভালো, ভিতটা শক্ত। ব্যাটিংয়ের মৌলিক জ্ঞান বেশ পোক্ত। তাদের অনেকেই খুব ভালো ব্যাট ঘোরাতে জানে। এই দলের সঙ্গে খুব বেশি সময় কাটানোর সুযোগ হয়নি। আলাদাভাবে কারও নাম বলতে চাচ্ছি না। সেই সময়ও পাইনি তাদের সঙ্গে মেশার। তবে এতটুকুন বলতে পারি অসম্ভব প্রতিভাবান তারা। আর তাদের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে খেলা আছে, সেখানে কেমন উন্নতি করে সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।

এবার জাতীয় দল প্রসঙ্গে আসি। সংক্ষিপ্ত সফরে বেশিরভাগ সময় কাজ করা হয়েছে লিটন-শান্তদের সঙ্গে। তাদের শুরুতে যেমন দেখেছিলেন এখন চলে যাওয়ার সময় কেমন উন্নতি দেখলেন?

উড: অবশ্যই লিটন-শান্তরা খুব ভালো খেলোয়াড়। বলতে হয়, খুবই টেকনিক্যালি সাউন্ড খেলোয়াড় ওরা। তাদের বেশ শক্তি আছে। একটা বিষয় উপলব্ধি করেছি, প্রচলিত আছে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শক্তি নেই। আসলে যথেষ্ট শক্তি আছে (বড় শট খেলার জন্য)। মূল বিষয় হলো, শারীরিকভাবে ক্যারিবিয়ান বা ইংলিশদের মতো না। তবে পেশি শক্তিটাই বড় না। ছন্দে থাকা আর আত্মবিশ্বাস থাকা গুরুত্বপূর্ণ। একবার যখন রিদম-টাইমিং এবং মুভমেন্ট পেয়ে যাবে আর বল যখন সঠিক সময় সঠিক ভাবে বুঝতে পারবে, তাহলেই জোরের সঙ্গে বলে হিট করতে পারবে। সেইসঙ্গে শরীরের মুভমেন্ট দিয়ে আরও বেশি জায়গা কীভাবে বের করতে পারে... আসলে এসব ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা এবং শক্তি দুটাই দরকার।

মাসখানেক কাজ করলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটাদের পাওয়ার হিটিং ক্ষমতা কম বলে মনে করেন?

উড: আমি এটাই বলেছি। প্রচলিত যে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা বলে জোরের সঙ্গে আঘাত করতে পারে না। আসলে তারা তাই (জোরে বল হিট করা) করে তবে সেটা করার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। তাই যেমনটা বললাম, এটা রিদম, টাইমিং এবং মুভমেন্টে নির্ভর করে। আর শরীর কীভাবে ব্যবহার করা যায়। আশা করি, ছেলেরা এসব বুঝতে শিখবে।

আপনার কাজ করার এই সময়ে যদি একজন ক্রিকেটারকে বেছে নিতে বলি যে পাওয়ার হিটিংয়ে এগিয়ে আছে মনে হয়েছে। আপনি কার কথা বলবেন?

উড : আমার যদি একজন ক্রিকেটারকে বেছে নিতে হয়, জাকের আলীর নাম বলবো। সে খুবই ভয়ানক হতে পারে। সে স্বভাবগতভাবেই বেশ জোরে বলে আঘাত করতে পারে। তার অ্যাটিটিউট খুব ভালো। বলে সবসময় জোরে হিট করতে চায়। তার বেশ শক্তি আছে, আর দারুণ একজন ক্রিকেটার। তাই আমি দেখতে চাই, সে কেমন করে। কারণ আমার মনে হয়, সে বিশ্বের সেরাদের একজন হতে পারে।

নেদারল্যান্ডস সিরিজে ব্যাটাররা পাওয়ার হিটিং প্রমাণ করতে পেরেছে?

উড: অবশ্যই। বিশেষ করে যদি প্রথম দিনের কথা বলি, উইকেট ভালো ছিল। বল ভালোভাবে ব্যাটে আসছিল। বাংলাদেশ দারুণভাবে রান চেজ করেছে। আমি চেয়েছি ওরা খেলায় আধিপত্য দেখাক। পাওয়ারপ্লেতে যেন ৬০ বা অন্তত ৫৭ রান আসে। আমি চেয়েছিলাম ১৩ ওভারেই জিততে। ওরা এরচেয়ে কিছুটা বেশি খেলেছে। ওরা খুবই আগ্রাসী ছিল। যদি আমি আসার আগে পরিসংখ্যান দেখেন, স্ট্রাইকরেট এবং অ্যাটাকিং বলের শতাংশ কম ছিল। এটা নেদারল্যান্ডস সিরিজ। সামনে এশিয়া কাপে হয়ত কঠিন ম্যাচ আসছে। তবে চিন্তা এবং মানসিকতা বিবেচনায় ওরা সঠিক পথে যাচ্ছে।

২য় ম্যাচের কথায় যদি আসি, নেদারল্যান্ডস ১০৪ রানে অলআউট হয়, এটা আদর্শ না। আমি খেলোয়াড়দের এরপর চ্যালেঞ্জ দিই। বলেছিলাম, যদি ইংল্যান্ডের খেলা হয় তারা কীভাবে খেলতো। আমরা এশিয়া কাপের জন্য পরিকল্পনা করছি। বিশ্বকাপ বিবেচনায় রেখেছি। ম্যাচটা ১০ ওভারে জেতা যাক। শেষ পর্যন্ত আমরা ১৩ ওভারে জিতেছি।

ওদের মূল স্পিনার ইনজুরিতে ছিল। ম্যাক্স ও ডাইড বল করেছে, যে হয়ত বোলিং করে না। তাই আমরা ভালোভাবেই শেষ করেছি। ব্যাটিং ইউনিট আরও ভালো করতে নিজেদেরকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। আমরা শীর্ষ ৩ দল এবং বাকিদের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আনতে চাই। আমি মনে করি, খুব দ্রুতই উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আমরা ঠিক পথে এগোচ্ছি।

বিসিবির সঙ্গে আপনার চুক্তি লম্বা হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না, কারণ কী। ভবিষ্যতে ডাক পেলে আবার আসতে চান কি না ...

উড: হ্যাঁ। চুক্তি বাড়ানো নিয়ে কথা হয়েছিল। এই মুহূর্তে আমি অন্য এক দেশের অন্য একটি প্রস্তাবের অপেক্ষা করছি। আমার দিক থেকে বললে নারী দল এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে আরও সময় কাটানো উচিত ছিল। আর জাতীয় দল তারা উন্নতি করছে। আরও উচ্চতায় যেতে সক্ষম। তবে তাদের কাজের ধারা বুঝতে হবে। কেবল ফলাফল দেখলে হবে না। তাদের সঙ্গে আরও কাজ করার ইচ্ছা আছে। তারা আরও ভালো করতে পারে। একেবারে শীর্ষে যাওয়ার মতো। তবে এসবে আমার হাত নেই। এটা ম্যানেজমেন্টের বিষয়। অবশ্য এই মুহূর্তে আমি উন্মুক্ত। দেখা যাক কী হয়।

বিসিবির আতিথেয়তা কেমন পেলেন, বিদায় বেলায় কোনো অভিযোগ রয়েছে কি?

উড: বিসিবির আতিথেয়তা ছিল অসামান্য। নারী-পুরুষ দুই দলেই অভিজ্ঞতা ভালো। অনূর্ধ্ব-১৯ দল কিংবা কোচিং স্টাফ সবাই আন্তরিক। বলতে পারেন, আমি এখানে ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, এখানে থাকা বা মানিয়ে নেওয়া সহজ। আশা করি, বাকি খেলোয়াড় আর কোচিং স্টাফদের জন্যেও এমন পরিবেশ থাকবে। আমি আরও বেশি সময় যুক্ত থাকতে চাই, তবে সেটা আমার হাতে নেই। ম্যানেজমেন্টের বিবেচ্য বিষয়। তবুও বলছি, অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল।

এসএইচ/এফআই

Lading . . .