‘ভোটের দিন রাত ১১টার মধ্যে রেজাল্ট হলে সহকর্মীর মৃত্যু দেখতে হতো না’
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনার কারণেই হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভোটের দায়িত্বে থাকা অপর এক শিক্ষক। নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার এই মৃত্যুর ঘটনার সঠিক বিচারের পাশাপাশি জান্নাতুল ফেরদৌসের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবনের সামনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন সুলতানা আক্তার। তিনি ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনের কারণে নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। যেভাবে ভোট গণনা হচ্ছে, তাতে তিন দিনেও শেষ হবে না বলে মনে করছেন এই শিক্ষক।
সুলতানা আক্তার বলেন, ‘সহকর্মীর মৃত্যুতে আমরা সবাই ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। ভোট সুষ্ঠুভাবে করতে আমরা শতভাগ চেষ্টা করেছি। আমার কেন্দ্রে শতভাগ সুষ্ঠুভাবে ভোট নিয়েছি। সেখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমাদের কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠুভাবে করতে অমানুষিক পরিশ্রম করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা আক্তার বলেন, ‘আমাদের মতবিনিময় সভায় জানানো হয়েছিল, মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনা করা হবে। আমরা শুধু সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ করে সিনেট ভবনে দেব (ব্যালট বাক্স)। নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব জানিয়েছিলেন, সিনেট ভবনে ভোট গণনা হবে। তখন আমি প্রশ্ন করেছিলাম, কেন সিনেট ভবনে হবে? তাহলে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাহলে কেন আমরা হলগুলোতে গণনা করব না? তখন বলা হয়েছিল, মেশিনের মাধ্যমে গণনা করা হবে। এতে সবার কষ্ট কমবে। আমরা সেটি মেনে নিয়েছিলাম এবং সেটিই করা হবে বলে জানতাম।’
ভোট গ্রহণের সময় গতকাল বৃহস্পতিবার হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে (হাতে গোনা) ভোট গণনা করার কথা জানতে পারেন বলে জানান অধ্যাপক সুলতানা আক্তার। তখনই জানানো হয় সিনেট হলে ভোট গ্রহণে দায়িত্বপ্রাপ্তদের উপস্থিত থাকতে হবে।
সুলতানা আক্তার বলেন, ‘যদি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই ভোট গণনা করা হয়, তবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হলেই যদি ভোট গণনা করা হতো তবে দেখা যেত রাত ১০টার মধ্যে বিভিন্ন হলের রেজাল্ট হয়ে যেত। এবং আমরা রেজাল্ট নির্বাচন কমিশনে নিয়ে আসতাম এবং রাত ১১টার মধ্যেই রেজাল্ট দেওয়া যেত। (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার মধ্যে রেজাল্ট হলে আমার সহকর্মীর মৃত্যু দেখতে হতো না। কারণ, তিনি সারা দিন অমানুষিক পরিশ্রম করার পর বিশ্রাম নিতে গিয়েছেন, তাঁকেও তো বলা হয়েছে আবার ভোট গণনার জন্য তাঁকে সিনেট ভবনে আসতে হবে। তিনি হয়তো এ কারণে স্ট্রেস (মানসিক চাপ) নিয়ে ঘুমাতে পারেননি।’
ভোট গণনা পদ্ধতির পরিবর্তন দাবি করে এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘হল সংসদে একটিমাত্র ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হচ্ছে; কিন্তু জাকসুতে তিনটা করে। অর্থাৎ যদি ৮ হাজার ভোট কাস্ট হয়ে থাকে তবে ২৪ হাজার গুনতে হবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব, তিন দিনেও তো এটা সম্ভব হবে না।’
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর বৃহস্পতিবার জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ এবং ছাত্র ৬ হাজার ১৫ জন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।
জাকসু কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭৭ জন প্রার্থী। একই সঙ্গে ২১টি হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী ৯ জন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
জাকসুতে এবার পূর্ণ ও আংশিকসহ আটটি প্যানেল হয়েছিল। এর মধ্যে ছাত্রদলের প্যানেল, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ (২৫ পদে ৫ প্রার্থী), স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ (৮ প্রার্থী) এবং ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের একটি প্যানেল (৩ প্রার্থী) ভোট বর্জন করেছেন। কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ভোট বর্জন করেছেন।
অবশ্য ভোটে ছিল ছাত্রশিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুর রশিদ জিতুর নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন।