Advertisement

তৈরি হচ্ছে ৯০ বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র

যুগান্তর

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জানমাল রক্ষায় তৈরি করা হচ্ছে ৯০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এজন্য ৬৩৬ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এটি আজ বুধবার উপস্থাপন করা হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দুর্যোগকালীন বিপদাপন্ন মানুষের জীবন ও তাদের মূল্যবান সম্পদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ ঝুঁকিও কমে যাবে। এক্ষেত্রে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সক্ষমতাও বাড়বে। এসব বিবেচনায় ‘উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। এসব কারণে অতীতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া কয়েক বিলিয়ন ডলার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ‘বিশ্ব ঝুঁকি প্রতিবেদন-২০২২’ অনুযায়ী প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপদাপন্ন ১৯২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। এছাড়া এশিয়া মহাদেশের মধ্যে পঞ্চম অবস্থান। দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ ১৭টি জেলায় বসবাস করে। দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর জন্য স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থা ৪ হাজার ৬৫৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। বিভিন্ন সময় দুর্যোগের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে সরকার ত্রাণসামগ্রী, ঢেউটিন এবং অর্থসহায়তা পৌঁছে দেয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা অতিদরিদ্র হওয়ার কারণে আগের অবস্থায় সম্পূর্ণরূপে ফিরে আসতে পারছেন না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ওইসব অঞ্চলের মানুষের জানমাল ‘রক্ষায় উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ’ নামে প্রকল্প নেওয়া হয়। এর আওতায় ২০১১ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে প্রথম পর্যায়ে ১০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত তৈরি করা হয় ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হলো-৩ তলাবিশিষ্ট ১ হাজার ২৭২ বর্গমিটার আয়তনের ৯০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়া এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য প্রতিটিতে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩ বিভাগের ১২টি জেলার ৪৭টি উপজেলায় এসব আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হবে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় ৪টি, আশাশুনিতে ২টি এবং কালীগঞ্জে ২টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়া বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোংলায় দুটি করে তৈরি হবে। খুলনার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছায় দুটি করে আশ্রয়কেন্দ্র হবে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় একটি, বরগুনার পাথরঘাটা, আমতলী, তালতলী ও বেতাগী উপজেলায় দুটি করে আশ্রয়কেন্দ্র হবে। এছাড়া পটুয়াখালীর কলাপাড়া, গলাচিপা, রাঙ্গাবালি, মির্জাগঞ্জ ও দশমিনায় দুটি করে এবং বাউফলে ৩টি ও পটুয়াখালী সদরে একটি কেন্দ্র তৈরি করা হবে। ভোলার বোরহান উদ্দিন, চরফ্যাশন, লালমোহন, দৌলতখান, মনপুরা ও তজুমুদ্দিনে দুটি করে এবং বেতাগী উপজেলায় একটি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হবে। লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি হবে। নোয়াখালীর হাতিয়া ও কোম্পানিগঞ্জে দুটি করে এবং সুবর্ণচরে ৩টি কেন্দ্র করা হবে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, মীরসরাই ও বাঁশখালীতে দুটি করে এবং সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়িতে একটি করে কেন্দ্র হবে। কক্সবাজারের মহেশখালী, চকোরিয়া ও টেকনাফে দুটি করে, পেকুয়ায় ৩টি এবং কক্সবাজার সদর ও উখিয়ায় একটি করে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হবে। ফেনীর সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলায় দুটি করে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

Lading . . .