প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

‘আমার সন্তানদের তুমি দেখে রেখ আর আমাকে মাফ করে দিও’-শেষ বিদায়ের এই কথাই এখন ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদের স্ত্রী মনিরা আক্তারের বুক ভেঙে দিচ্ছে বারবার। টঙ্গীর ভয়াবহ কেমিক্যাল বিস্ফোরণে জীবন বাজি রেখে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারালেন শামীম। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে সাংবাদিকদের কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বামীর শেষ মুহূর্তের কথা জানান মনিরা আক্তার। তিনি আরও বলেন, এখন আমি আমার তিন সন্তান নিয়ে কীভাবে বাঁচব, ভেবে পাচ্ছি না।
মনিরা আক্তার বলেন, আমরা টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের কোয়ার্টারে থাকি। সোমবার কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আমার স্বামীসহ তার সহকর্মীরা আগুন নেভাতে যায়। হঠাৎ বিস্ফোরণে পুরো শরীর দগ্ধ হয় শামীমের। তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে শেষবারের মতো তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তখন সে বলেছিল, ‘তুমি আমার সন্তানদের দেখে রেখ, আমি বাঁচব না, আর আমাকে মাফ করে দিও।’ বিকাল ৩টার দিকে সে মারা যায়। শামীমের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী মনিরা আক্তার ও তিন সন্তান। বড় ছেলে নাবিল আহমেদ (১২) স্থানীয় মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় মেয়ে হুমাইরা (৮) একটি মহিলা মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। আর ছোট মেয়ের বয়স ৫ বছর। বাবাকে হারিয়ে তারা এখন অসহায়। মনিরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছোট মেয়েটি তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসত। এখন তাকে কীভাবে বোঝাব যে তার বাবা আর নেই? আমার সব শেষ হয়ে গেল।
শামীমের বৃদ্ধা মা রাজ বানু কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আইসিইউতে গিয়ে ছেলেকে শেষবারের মতো দেখি। শামীম বলল, ‘মা আইছো, আমি আর বাঁচমু না।’ এই ছিল আমার শেষ কথা তার সঙ্গে। ৭ সন্তানের মধ্যে শামীম ছিল ৬ নম্বর। তার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। এখন আমিই বা কাকে নিয়ে বাঁচি।
শামীম আহমেদ নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার রায়পুর পাইজাহাটি গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে। অগ্নিনির্বাপক দলের এক সাহসী যোদ্ধা হিসাবে তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে ডিউটি পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জানান, সোমবার টঙ্গীর সাহারা মার্কেট এলাকার কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্য শামীম আহমেদসহ চারজন দগ্ধ হন। শামীমের শরীরের ১৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। বিকাল ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বর্তমানে ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে লড়ছেন নুরুল হুদা এবং ৪২ শতাংশ দগ্ধ খন্দকার জান্নাতুল নাঈম। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।