কিশোরগঞ্জেও দেখা মিলল দুর্লভ ফুল নাগলিঙ্গম
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

এবার কিশোরগঞ্জে দেখা মিলল দুর্লভ ফুল নাগলিঙ্গমের। দৃষ্টিনন্দন এ ফুলের পরাগ চক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। ধারণা করা হয়, এ কারণেই এ ফুলের নাম নাগলিঙ্গম। বেশির ভাগ উদ্ভিদের ফুল শাখায় ফুটলেও নাগলিঙ্গমের ফুল ফোটে গাছের গুঁড়িতে। গুঁড়ি ফুঁড়ে বের হয় ছড়া। এরপর ফুটে শত শত ফুল। ফুলভর্তি গাছ দেখলে মনে হতে পারে এর কাণ্ড ছেদ করে ফুলগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ শহরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ আজিম উদ্দিন হাইস্কুলের খেলার মাঠের পাশে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছন লাগোয়া নাগলিঙ্গম ফুলের গাছটি। গাছে থোকায় থোকায় ফুল ও কলি ঝুলে রয়েছে। গাছটির নাম অনেকের কাছেই অজানা থাকলেও এর সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। দুর্লভ এই গাছটি সংগ্রহ করে লাগিয়েছিলেন আজিম উদ্দিন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মরহুম মোহাম্মদ মতিউর রহমান।
নাগলিঙ্গম ফুল গাঢ় গোলাপি, সেই সঙ্গে থাকে হালকা হলুদ রংয়ের মিশেল। পাপড়ি ছয়টি, এগুলো গোলাকার ও মাঝখানটা কুণ্ডুলির মতো। যেন ফণা তোলা সাপ। ফুলগুলো বেশ বড় হওয়ায় এগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।
নাগলিঙ্গম সৌরভের জন্যেও বিশেষভাবে খ্যাত। কী দিন, কী রাত, নাগলিঙ্গম গাছের পাশ দিয়ে গেলে এর তীব্র ঘ্রাণের মাদকতা যে কাউকেই কাছে টানে। বিরল প্রজাতির এই ফুলের সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। নাগলিঙ্গম সারা বছর ফুটলেও গ্রীষ্মকাল হচ্ছে এটি ফোটার আসল সময়। শীত ও শরতে অপেক্ষাকৃত কম ফুল ফোটে। ফুল ধরার পর বেলের মতো গোল গোল ফল ধরে। এগুলো হাতির খুবই প্রিয় খাবার। এজন্য আমাদের দেশে এটিকে হাতির জোলাপ গাছ বলা হয়। ফল হুবহু কামানের গোলার মতো হওয়ায় ইংরেজদের কাছে এ গাছের নাম ‘ক্যাননবল’। অর্থাৎ কামানের গোলা। ফল পাকতে এক বছর সময় লাগে। পাকা ফল মাটিতে পড়লে ফেটে যায়। বাতাসে খানিকটা ঝাঁজাল গন্ধও সৃষ্টি হয়। তাই এটি মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়। তবে আমাজন অববাহিকার একটি জনগোষ্ঠীর কাছে এটি প্রিয় খাবার। প্রকৃতপক্ষে নাগলিঙ্গম দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের ফুল। ভারতে বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে এই ফুলকে পবিত্র বলে গণ্য করা হয় এবং অনেক মন্দিরে এটি দেখা যায়। সনাতন ধর্মমতে, নাগলিঙ্গম ফুলকে ভগবান শিবের প্রতীক হিসাবে পূজা করা হয়। প্রতিটি ফুলের মাঝখানে শিবলিঙ্গের মতো একটি গঠন এবং চারপাশে ফণা তোলা সাপের মতো আকৃতির কারণে এর নাম নাগলিঙ্গম। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শিবের পূজায় নাগলিঙ্গম ফুলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অন্যদিকে নাগলিঙ্গম গাছের বিভিন্ন অংশ ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। তাই ভেষজ চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয় এটি। এর পাতা ত্বকের বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস ক্ষতস্থানে ব্যবহার করলে দ্রুত নিরাময় হয়। বিশেষ করে এর পাতা চর্মরোগে বেশ উপকারী। এর ছাল জ্বর, সর্দি-কাশি ও দাঁতের ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধেও কার্যকর। এর ফল থেকে প্রাপ্ত নির্যাস অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসাবে কাজ করে। এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এর পরিবেশগত গুরুত্বও অপরিসীম। নাগলিঙ্গম ফুল মৌমাছি ও প্রজাপতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মধুর উৎস। এই ফুলের গন্ধ মৌমাছিকে আকর্ষণ করে, ফলে পরাগায়ণে সহায়তা করে।