ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে অভিনয়, অভিনয় থেকে ব্যবসা—কৃতি শ্যাননের অনবদ্য পথচলা
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

বলিউডে কৃতি শ্যানন এখন পরিচিত ও প্রশংসিত নাম। তাঁর হাতে সাফল্য ধরা দিয়েছে প্রচলিত ধারার বাইরে। বলিউডে কোনো পারিবারিক যোগসূত্র ছিল না, ফলে বলিউডে পা রাখেন সম্পূর্ণ ‘বাইরের মানুষ’ হিসেবে। মডেলিং দিয়ে যাত্রা শুরু করে ধীরে ধীরে নিজের স্বতন্ত্র স্টাইল ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে জায়গাটা পাকা করে নিয়েছেন। বড় সুযোগ আসে ২০১৪ সালে, টাইগার শ্রফের সঙ্গে ‘হিরোপন্তি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। এ সিনেমাই ছিল তাঁর বলিউডে শক্ত অবস্থান গড়ার সূচনা।
২০১৫ সালে শাহরুখ খান ও কাজলের সঙ্গে রোহিত শেঠির ব্লকবাস্টার ‘দিলওয়ালে’তে অভিনয় করে উঠে আসেন আলোচনার কেন্দ্রে। পরবর্তী কয়েক বছর ‘বেরেলি কি বরফি’, ‘লুকা ছুপি’, ‘হাউসফুল ৪’–এর মতো হিট সিনেমায় অভিনয় করেছেন কৃতি।
২০২১ সালে ‘মিমি’ সিনেমায় সারোগেট মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে অর্জন করেছেন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২৭ জুলাই ৩৫ বছর পূর্ণ করলেন কৃতি। এই বয়সে যা অর্জন করেছেন, তা রীতিমতো অনুপ্রেরণাদায়ী। পড়ুন বিস্তারিত।
অভিনয়ের বাইরে কৃতির আগ্রহ ছিল আরও অনেক ক্ষেত্রে। বছরের পর বছর গ্ল্যামার আর সৌন্দর্যের জগতে থাকার কারণেই ত্বকচর্চার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ। করোনাকালে ত্বকচর্চার রুটিন ও উপাদান নিয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা শুরু করেন।
২০২৩ সালে চালু করেন নিজের বিউটি ব্র্যান্ড ‘হাইপেন’। ব্র্যান্ডটির সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। সঙ্গে ছিল পেপ টেকনোলজিস, যারা জনপ্রিয় পারসোনাল কেয়ার ব্র্যান্ড ‘এম কাফিন’–এর নির্মাতা। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ব্র্যান্ডটি প্রথম বছরেই প্রায় ১০০ কোটি রুপি আয় করে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান তৈরি করে নেয়।
আজ হাইপেন ভারতের শীর্ষ প্রসাধনীর ব্র্যান্ডগুলোর অন্যতম। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আছে ক্যাটরিনা কাইফের ‘কে বিউটি’, মীরা রাজপুতের ‘এ কাইন্ড’ ও আশকা গোরাডিয়ার ‘রেনে কসমেটিকস’। কৃতির সরাসরি অংশগ্রহণ ও ত্বকচর্চার প্রতি তাঁর আন্তরিক ভালোবাসাই ব্র্যান্ডটির দ্রুত সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
প্রসাধনীর জগতে প্রবেশের আগেই ফিটনেস অঙ্গনে পা রেখেছিলেন কৃতি। ২০২২ সালে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সূচনা করেন ‘দ্য ট্রাইব’ নামের এক ফিটনেস ব্র্যান্ডের। এ ব্র্যান্ডের সূচনা আদতে কৃতির ব্যক্তিগত সংগ্রাম ও পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা থেকেই।
‘মিমি’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় চরিত্রের প্রয়োজনে কৃতি প্রায় ১৫ কেজি ওজন বাড়ান। কিন্তু করোনাকালে লকডাউনের কারণে জিম বন্ধ থাকায় সেই বাড়তি ওজন কমানো তাঁর জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
রাজ শামানি নামের এক উদ্যোক্তা ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সঙ্গে আলাপচারিতায় কৃতি জানান, তিনি লকডাউনের সময় বাড়িতে থেকেই চারজন ব্যক্তিগত ট্রেনারের ভার্চ্যুয়াল নির্দেশনায় ওয়ার্কআউট করতেন। এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই তাঁকে সেই চারজন প্রশিক্ষকের সঙ্গে মিলে দ্য ট্রাইব প্রতিষ্ঠা করতে অনুপ্রাণিত করে।
একই বছর কৃতি মুম্বাইয়ের অভিজাত জুহু এলাকায় প্রথম ফিটনেস স্টুডিও চালু করেন। দুই বছর পর ২০২৪ সালে, দ্বিতীয় স্টুডিও খোলেন বান্দ্রায়, যা মুম্বাইয়ের সম্ভ্রান্ত পাড়া হিসেবে পরিচিত। ব্যক্তিগত সংকটকে অনুপ্রেরণা ও ব্যবসায়িক সাফল্যে রূপান্তরিত করার চমৎকার উদাহরণ দ্য ট্রাইব।
২০২৩ সালে কৃতি প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রযোজনা সংস্থা ‘ব্লু বাটারফ্লাই ফিল্মস’, যার লক্ষ্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গল্পগুলোকে পর্দায় নিয়ে আসা। এই ব্যানারের অধীন ২০২৪ সালে প্রযোজনা করেন নেটফ্লিক্সের জন্য বানানো সিনেমা ‘দো পাত্তি’, যেখানে স্বয়ং কৃতি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। সিনেমাটি আলোচনায় আসে অভিনয়ে কৃতির নতুনত্ব ও কাজলের প্রথমবার পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য।
ব্যবসায়িক সাফল্যের প্রতিফলন দেখা যায় কৃতির রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগেও। ‘মানি কন্ট্রোল’–এর তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি তিনি মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছেন, যার মাসিক ভাড়া ১৭ লাখ রুপি—বার্ষিক ভাড়া ২ কোটি রুপির বেশি। তাঁর প্রতিবেশীদের মধ্যে আছেন ক্রিকেটার কে এল রাহুল ও অভিনেতা জাভেদ জাফরি। শুধু শহুরে সম্পত্তি নয়, ২০২৪ সালে কৃতি সমুদ্র উপকূলবর্তী আলিবাগে কিনেছেন দুই হাজার বর্গফুট জমি, যার মূল্য দুই কোটি রুপির বেশি। একই প্রকল্পে বলিউড কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চনও জমি কিনেছেন। এতেই বোঝা যায়, বিলাসবহুল সম্পত্তিতে কৃতির বিনিয়োগ বা আগ্রহের বিষয়টি।
‘সিএনবিসি টিভি ১৮’–এর তথ্য অনুযায়ী, কৃতির ব্যক্তিগত সম্পদের মূল্য প্রায় ৮২ কোটি রুপি। বলিউডের কয়েকজন অভিনেত্রীর মধ্যে তিনি একজন, যাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা মজবুত। নয়ডার জেপি ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রনিকস ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০১৫ সালে ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কৃতি বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে অভিনয়ে আসাটা যেন নিজে থেকেই হয়ে গেল। কিছু জিনিস বোধ হয় ভাগ্যেই লেখা থাকে।’
সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস