Advertisement

জাতীয় নারী দলের ফুটবলার সোনালীকে দেয়া হবে পাকা ঘর

নয়াদিগন্ত

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

জাতীয় নারী দলের ফুটবলার সোনালীর বাড়ি পরিদর্শন করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী |সংগৃহীত
জাতীয় নারী দলের ফুটবলার সোনালীর বাড়ি পরিদর্শন করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী |সংগৃহীত

জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক ফেরদৌসি আক্তার সোনালীর পরিবারে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। দ্রুতই তাদের কুঁড়ে ঘরটিকে সংস্কার করে নির্মাণ করা হবে বিশেষ সুবিধা সম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন পাকা ঘর। বাবা ফারুক ইসলামের উপার্জনের সম্বল ভ্যানের বদলে দেয়া হবে নতুন ইজিবাইক।

সোমবার (২৫ আগস্ট) তার বাড়িতে পরিদর্শনে এসে এ আশ্বাস দেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী। এ সময় তার বাড়ির সামনের কাঁচা সড়কটিও পাকা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

সোনালীর বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রামে।

প্রত্যন্ত গ্রামে ডিসির আগমনের খবরে সোনালীর বাড়িতে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন উৎসুক এলাকাবাসী। বাড়ির উঠানে সামান্য আনুষ্ঠানিকতারও আয়োজন করেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ।

ঘড়িতে তখন সাড়ে ৪টা। জেলা প্রশাসক সাবেত আলী পা রাখেন সোনালীদের ভাঙা কুটিরে। সোনালী ও তার বাবার হাতে তুলে দেন নিয়ে আসা উপহার সামগ্রী। এদিন সোনালীর অনুশীলন প্রতিষ্ঠান টুকু ফুটবল একাডেমিকে এক লাখ টাকা অনুদান এবং তার উঠে আসার সারথি হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি দেয়াল ও সাইকেল গ্যারেজের বরাদ্দ ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক। পরে তাদের বাড়িতে স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা আবুল হাসেম, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নুর-ই-আলম, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান বুলবুল, টুকু ফুটবল একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান, ইউপি সদস্য গোবিন্দ চন্দ্র রায়, শফিউল আলম শফিক।

উচ্ছ্বসিত ফারুক ইসলাম বলেন, আমার মেয়ের সাফল্যে আজ আমার মতো ভ্যানচালকের বাড়িতে ডিসি, ইউএনও আসছে- আমি গর্বিত।

ফেরদৌসী আক্তার সোনালী বলেন, স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বহু প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি। আজকে নিজেকে অনেকটাই সফল মনে হচ্ছে। যারা একসময় কটুকথা বলতো তারাও আজকে উৎসাহ দিচ্ছে। জেলা প্রশাসক আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে এটা আমার বড় পাওয়া। আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই।

হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, ভ্যান চালক বাবার মেয়ে সোনালী ফুটবলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে, এটা আমাদের জন্য গর্বের। আজকে তার সাফল্যের প্রতিদান স্বরূপ প্রত্যন্ত গ্রামের জরাজীর্ণ এই বাড়িতে জেলা প্রশাসক এসেছন। তিনি সোনালীর পরিবারের উন্নয়নের পাশাপাশি কাঁচা সড়ক পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং যেই বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সোনালীর ফুটবলে সূচনা, সেই বিদ্যালয়ের উন্নয়নেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটা আমাদের অনেক বড় পাওয়া। জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক ইয়ারজানের বাড়িও আমাদের ইউনিয়নে। আমাদের ইউনিয়নের মেয়েরা জাতীয় পর্যায়ে এলাকাকে তুলে ধরছে এটাও আমাদের বড় গর্ব।

জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে আসা সোনালী তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখছে। দেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চেষ্টা করছে। তার পরিবার এবং এই এলাকার মানুষের সাথে আমরাও আনন্দিত। আমরা দেখেছি সোনালী দারিদ্রতা জয় করে এ পর্যন্ত এসেছে, তার বাবা ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করে। তাদের বাড়িটিও জরাজীর্ণ। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- তাদের টিনের জরাজীর্ণ ঘরটি সরিয়ে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেব। আমরা আসার সময় দেখেছি মূল রাস্তা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ধরে তাদের বাড়ি, আমরা এই রাস্তাটিও পাকা করে দেব। জাতীয় নারী ফুটবল দলের আরেক গোলরক্ষক ইয়ারজানের বাড়িও এই এলাকায়। দুজনেরই ফুটবলের হাতেখড়ি হয় হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং টুকু ফুটবল একাডেমিতে। এজন্য আমরা হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহায়তা এবং টুকু ফুটবল একাডেমিকেও বিশেষ বরাদ্দের ঘোষণা দিচ্ছি। এদের মাধ্যমে আরো প্রতিভাবানরা উঠে আসবে বলে আশা রাখি।’

আরও পড়ুন

Lading . . .