Advertisement

যেভাবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে যেতে পারে বাংলাদেশ

নয়াদিগন্ত

প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল
এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল

পূর্ব তিমুর বা তিমুর লেস্তে। পর্তুগিজ ভাষায় লেস্তে মানে পূর্ব। তিমুর সাগরে ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে অবস্থিত এই দেশটির বিপক্ষে শুক্রবার (৮ আগস্ট) প্রথম ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল।

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৫৭-তে থাকা দলটির বিপক্ষে আফঈদা খন্দকার প্রান্তিদের বড় জয়ই পাওয়ার কথা ছিল। সেই জয়ই এসেছে। স্ট্রাইকার তৃষ্ণা রানীর হ্যাটট্রিকে ৮-০ গোলের বড় জয়। এই জয় এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলের এইচ’ গ্রুপের রানার্সআপ হওয়াটা নিশ্চিত করেছে পিটার জেমস বাটলার বাহিনীর। এখন অপেক্ষা চূড়ান্ত পর্বে উঠার। এজন্য পরের ম্যাচ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে জিতলেই মিলবে প্রথমবারের মতো এই আসরের চূড়ান্ত পর্বে খেলা। ড্র করলেও চূড়ান্ত পর্বে উঠা হবে। গ্রুপ রানার্সআপ হলেও ফাইনাল রাউন্ডে যাওয়া যাবে। তবে এ জন্য সেরা তিন রানার্সআপের একটি হতে হবে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) গ্রুপের অন্য ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়া ১-০ গোলে হারায় লাওসকে। এতে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার পয়েন্ট সমান ৬ হলেও গোল পার্থক্যে এগিয়ে বাংলাদেশ। তারা ১১ গোল দিয়ে ১ গোল হজম করেছে। আর কোরিয়া দিয়েছে ১০ গোল। এতে গোল পার্থক্য সমান হলেও বেশি গোল দেয়ায় শীর্ষে লাল-সবুজরাই।

আজ ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে হংকং ০-৬ গোলে ভিয়েতনামের কাছে হেরে পিছিয়ে গেছে রানার্সআপ হিসেবে চূড়ান্ত পর্বে উঠার লড়াইয়ে। ‘এ’ গ্রুপে নেপাল আজ ১-০ গোলে সৌদি আরবকে হারিয়ে এখনো আশায় আছে। তবে ৪ পয়েন্ট পাওয়া নেপাল শেষ ম্যাচ খেলবে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে। ডি’ গ্রুপে ভারত ও মিয়ানমারের পয়েন্ট চার করে। ১০ তারিখে এই দু’ দলের ম্যাচ। সুতরাং এই গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান পাওয়া দল বাংলাদেশের জন্য সমস্যা নয়। তাদের পয়েন্ট বড় জোর ৫ হবে। আজ ভারত ৭-০ তে তুর্কমেনিস্তানকে হারালেও ইন্দোনেশিয়ার সাথে ২-২ গোলে ড্র করেছে মিয়ানমার। ‘ই’ গ্রুপে লেবাননের পয়েন্ট ৬ হলেও তাদের শেষ খেলা চীনের সাথে। এই মুহূর্তে লেবানিজদের গোল পার্থক্য +২। চীনের কাছে হারলে তাদের সুযোগ একেবারেই কমে যাবে। আজ চীন ৭-০তে হারিয়েছে কম্বোডিয়াকে। আর লেবাননের ২-১ জয় ছিল সিরিয়ার বিপক্ষে। এফ গ্রুপে জাপান ও ইরানের পয়েন্ট ৬ করে। ১০ তারিখে এই দু’ দলের ম্যাচে ইরান হেরে গেলে তাদের বর্তমান গোল পার্থক্য +৫ আর থাকবে না। ফলে বাংলাদেশ যদি শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ১/২ গোলেও হারে তাহলেও যাওয়ার চান্স আছে ফাইনাল রাউন্ডে।

লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনের লাও জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে অবশ্য আট মিনিটে ভয় পাইয়ে দেয় লাওস। কর্নার থেকে তাদের একটি গোলের চেষ্টা গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার জয়নব বিবি রিতা। এরপর আর তেমন কোনো ছোবল মারতে পারেনি পূর্ব তিমুর। ম্যাচের বাকিটা সময় লাল-সবুজ মেয়েদের গোল উৎসব। ২০ মিনিটে প্রথম গোল। স্বপ্না রানীর নেয়া কর্নার থেকে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে হেডে বল জালে পাঠান সিনহা জাহান শিখা। ম্যাচের দ্বিতীয় গোল ৩৩ মিনিটে। এটি অলিম্পিক গোল। অনূর্ধ্ব-২০ সাফে ভুটানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা শান্তি মার্ডি বাম পায়ে কর্নার কিক নেন। সেই বল সাইড পোস্টে লেগে জালে জড়ায়।

ম্যাচের তৃতীয় গোলেও অবদান দিনাজপুরের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মেয়ে শান্তির। তার কর্নার থেকে নবীরন খাতুনের হেডে গোল উৎসব। সাবেক স্ট্রাইকার নবীরন এখন বাংলাদেশ দলের ডিফেন্ডার। লাল-সবুজ জার্সিতে পেলেন প্রথম গোল। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে চতুর্থ গোল পায় ঢাকা থেকে যাওয়া দলটি। সাগরিকার পাস থেকে দ্বিতীয় চেস্টায় ডান পায়ের টোকায় গোল করেন তৃষ্ণা রানী। পঞ্চগড় থেকে উঠে আসা তৃষ্ণা রানী এরপর ৫৭ ও ৮২ মিনিটে গোল করেন আদায় করেন হ্যাটট্রিক। ৫৭ মিনিটে ডান দিক থেকে আসা ক্রসে আরেক বাংলাদেশীর পা ঘুরে বিপক্ষ কিপারের হাতে লেগে ক্রসবারে প্রতিহত হয়। সেই বল কাছে আসা মাত্রই ডান পায়ের ভলিতে তা জালে পাঠান তৃষ্ণা। ৮২ মিনিটে তার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করা গোল ফের সাগরিকার অ্যাসিস্টে। লাওসের বিপক্ষে আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা সাগরিকার সেন্টারে পা লাগিয়ে নিজের তৃতীয় গোল আদায় তৃষ্ণার। ফলে মনিকা চাকমার পর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯/২০ ফুটবলে হ্যাটট্রিক পেলেন তৃষ্ণা। মনিকার হ্যাটট্রিক করেছিলেন ২০১৯ সালে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলে। এবারর অনূর্ধ্ব-২০ সাফে সাগরিকার অনুপস্থিতিতে তিন গোল করেছিলেন তৃষ্ণা। এর মধ্যে ছিল নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে উইনিং গোল।

এর আগে, সাগরিকা ৭৩ মিনিটে গোল উৎসবে মাতেন থ্রু পাস বল পেয়ে বিপক্ষ ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে কাটিয়ে।

আগের ম্যাচে পূর্ব তিমুরকে ৯ গোল দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। তাই বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল সেই স্কোর টপকানো। ৯৪ মিনিটে স্বপ্না রানীর ফ্রি-কিক ক্রসবারে লেগে গোললাইনের ভেতর ড্রপ খেয়ে মাঠে আসে। অথচ বাংলাদেশকে ন্যায্য গোলটি দেননি সহকারী রেফারি। শেষ পর্যন্ত ইনজুরি টাইমের ৬ মিনিটে মুনকি আক্তার গোল করলে অষ্টম গোল পায় লাল-সবুজরা। এটিই এএফসির অনূর্ধ্ব-১৯/২০ আসরে বাংলাদেশের সবচয়ে বড় ব্যবধানে জয়। আগের জয়টি ছিল তাকিজিস্তানের বিপক্ষে ২০১৯ সালে ৫-১-এ। স্বপ্নার গোল বাতিল না হলে ৯ গোল হতো।

বাংলাদেশ দল : স্বর্না (সোনালী ৮৫ মি.), নবীরন ( সুরমা ৭৮ মি.), জয়নব রিতা, আফঈদা (রুমা ৬৫ মি.), স্বপ্না, তৃষ্ণা, সাগরিকা, মুনকি, পুজা (যুথি ৬৫ মি.), শিখা, শান্তি (কানন ৬৫ মি.)।

আরও পড়ুন

Lading . . .