প্রকাশ: ২৭ আগস্ট, ২০২৫

ফুটবল মাঠের যোদ্ধা তানভীর চৌধুরীর জীবন কেড়ে নিয়েছিল একটি সড়ক দুর্ঘটনা। ২০১৫ সালের ১৯ মে নাটোর থেকে ঢাকা আসার পথে গুরুদাসপুরের কাছিকাটায় বিপরীতমুখী একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মক আহত হয়ে সাড়ে তিন বছর পঙ্গু হয়ে পড়েছিলেন।
কঠিন সেই সময়ে তার খোঁজ রাখেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) তৎকালীন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কিংবা অন্যরা। চরম আর্থিক সংকটে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। পরিবারও পড়ে যায় গভীর সংকটে।
একসময়ের দেশসেরা খেলোয়াড় তানভীরের জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছিল দুঃসহ যন্ত্রণায়। ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ৪০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
পরিবারের একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তার পরিবারও সংকটে পড়ে যায়। সেই সংকট আজও কাটেনি। দুই মেয়েকে নিয়ে তার স্ত্রী আলো চৌধুরী আর্থিক অনটনে দিন কাটাচ্ছেন।
তাজবিতা ও তানবিতা এখনো খুঁজে ফেরে বাবাকে। তারা জীবনের কিছু বুঝে ওঠার আগেই যে পরপারে চলে গেছেন তাদের বাবা জাতীয় দলের ও আবাহনীর সাবেক তারকা মিডফিল্ডার তানভীর চৌধুরী। স্ত্রী আলোর জীবন দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের পড়াশোনা চালাবেন নাকি খাবার জোগাড় করবেন সেই ভাবনা থাকে সব সময়। কাঁদতে কাঁদতে এখন আর চোখে জল আসে না।
ফুটবলের নিয়ন্ত্রকদের তাকিয়ে থাকতে থাকতে এখন আশাও ছেড়ে দিয়েছেন। খেলা ছাড়ার পর কোনো কর্মসংস্থান ছিল না তানভীরের। হাসপাতালে একনজর দেখতেও যাননি বাফুফের কর্তারা। মাত্র আট বছর বয়সে বাবাকে হারায় তাজবিতা। তখনো কিছু বুঝত না তানবিতা। তার বয়স তখন ছিল মাত্র তিন। অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে থেকেও তানভীরের স্ত্রী আলোর কারও বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ নেই।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আলো বলেন, ‘ফুটবলই ছিল তানভীরের সব কিছু। ফুটবলের জন্যই পরিবারের প্রতি তেমন নজর দিতে পারেননি। জীবনে চলার মতোও কিছু করে যেতে পারেননি। স্বামীকে হারিয়ে আমি অতল সমুদ্রে পড়ে যাই। দুই মেয়েকে নিয়ে কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মাঝে তানভীরের সতীর্থ, কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন। তবে সেটা জীবন চালানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। এখনো মেয়েদের ভালো খাবার, ভালো পোশাক, পড়াশোনার জন্য চাহিদামতো সব কিছু দিতে পারি না। হয়তো আমৃত্যু এ যন্ত্রণা নিয়েই আমাকে থাকতে হবে।’