কাশির সিরাপ খেয়ে নিষিদ্ধ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন এখন ফেরার অপেক্ষায়
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ছোটখাটো গড়নের মানুষ হলে কী হবে, খেলতে পারেন আক্রমণভাগের যেকোনো জায়গায়। কখনো ফরোয়ার্ড, কখনো লেফট উইঙ্গার আবার কখনো অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা, ফিনালিসিমার পাশাপাশি জিতেছেন বিশ্বকাপও।
সেই আলেহান্দ্রো দারিও গোমেজের কাছে ফুটবল মৃত মনে হচ্ছিল। তাঁকে সবাই পাপু গোমেজ নামেই চেনেন। একসময় সবুজ গালিচায় নিয়মিত পদচারণ ছিল তাঁর। হঠাৎ লম্বা সময়ের জন্য হারিয়ে যাওয়ায় ফুটবলকে মৃত মনে হওয়াটাই তো স্বাভাবিক!
২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপ জয়ের আগে গোমেজ খেলতেন সেভিয়ায়। স্প্যানিশ ক্লাবটিতে থাকতেই কয়েক দিন অসুস্থ বোধ করছিলেন। সামনে বিশ্বকাপ থাকায় দ্রুত সুস্থ হতে তিনি ।
তবে সিরাপটি খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেননি। পরে জানা যায়, ওই সিরাপ খেলোয়াড়দের জন্য নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকাভুক্ত। সিরাপে বিটা২-অ্যাড্রেনার্জিক নামক পদার্থ থাকায় ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন। পরবর্তী সময় ২০২৩ সালে অক্টোবরে গোমেজকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সময় তিনি খেলতেন ইতালিয়ান ক্লাব মোনৎসায়।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনেক দিন চুপ থাকার পর অবশেষে মুখ খুলেছেন গোমেজ। ৩৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল দে ভিসিতান্তে কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ার থমকে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই শাস্তিকে তাঁর কাছে অবিচার মনে হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে পাপু গোমেজ বলেছেন, ‘কেউ কোকেন বা গাঁজা সেবন করলে শাস্তি (নিষিদ্ধ) হয় মাত্র ছয় মাস, আর আমি ভুলবশত আমার ছেলের কাশির সিরাপ খেয়ে নিষেধাজ্ঞা পেলাম দুই বছর। এটা কি কারও কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে?’
নিষিদ্ধ হওয়ার পর গোমেজের কাছে কয়েক মাস দুঃস্বপ্নের মতো ছিল, ‘ফুটবল দেখতাম না, টিভি বন্ধ করে দিতাম। আমার কাছে ফুটবল মরে গিয়েছিল। নিজেকে আলাদা করে ফেলেছিলাম। পরে মনোবিদের সঙ্গে কাজ শুরু করি। কারণ, এটা একরকম মানসিক ফাঁদে আটকে পড়ার মতো ব্যাপার ছিল।’
সেভিয়া জানতে পেরেছিল, গোমেজের ওপর যেকোনো সময় নিষেধাজ্ঞার খড়্গ নেমে আসতে পারে। তাই ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় এক বছর মেয়াদ বাকি থাকতেই তাঁর সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতায় চুক্তি বাতিল করে সেভিয়া।
এরপর কোনো ক্লাবই গোমেজকে দলকে ভেড়াতে চাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রতি আগ্রহ দেখায় মোনৎসা। ফ্রি টান্সফারে (বিনা মূল্যে দলবদল) ইতালিয়ান ক্লাবটিতে যোগ দেন তিনি।
তবে নিষিদ্ধ হওয়ার পর কেউ কেউ ভেবেছিলেন, গোমেজের ক্যারিয়ার বোধ হয় শেষ হয়ে গেল। গোমেজ ক্ষুব্ধ তাঁর সমালোচকদের ওপরও, ‘কেন আমাকে জোর করে অবসর নিতে হবে, যদি এখনো অবসরের সময় এসে না থাকে? কেন দুই-তিনজন স্যুট পরা মানুষ, যারা জীবনে খেলাধুলাই করেনি, তারা ঠিক করবে আমি কবে অবসর নেব?’
দুঃসময়ে মানুষ চিনতে পেরেছেন বলেও জানিয়েছেন গোমেজ, ‘অনেকে দূরে সরে গিয়েছিল। আবার অনেকে অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে। এতেই বুঝেছি, কারা আমার পাশে আছে।’
একসময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও হাল ছাড়েননি পাপু গোমেজ। একাকি ফেরার লড়াই চালিয়ে গেছেন। জীবন তাঁকে আরেকটি সুযোগ দিয়েছে। সম্প্রতি ইতালিয়ান ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় স্তরের (সিরি ‘বি’) দল পাভোদার সঙ্গে তিনি দুই বছরের চুক্তি করেছেন। আগামী ১৮ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি মিলবে তাঁর। এরপর আর খেলতে নামতে বাধা নেই।
গোমেজ আপাতত ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন করছেন। সুযোগটাকে দুই হাতে লুফে নিতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।