Advertisement

অ্যালোপেসিয়া বা চুল পড়ায় ঘরোয়া সমাধানগুলো জেনে রাখুন

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

অ্যালোপেসিয়া এমন এক শারীরিক অবস্থা, যার কারণে মাথার ত্বক বা শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে চুল পড়ে যায়। চুল পাতলা হয়ে যাওয়া থেকে পুরোপুরি টাক হয়ে যাওয়ার কারণও হয়ে উঠতে পারে। বেশ কিছু কারণে অ্যালোপেসিয়া হতে পারে। এর মধ্যে জিনগত, অটোইমিউন ডিজঅর্ডার, হরমোনের পরিবর্তন, মানসিক চাপ বা কিছু ওষুধের প্রভাব আছে।

সবচেয়ে পরিচিত কারণ হলো অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া (প্যাটার্ন টাক)। নারী ও পুরুষ—উভয়ের ক্ষেত্রেই এই ধরন দেখা দিতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি পুরুষ প্যাটার্ন টাক আর নারীদের ক্ষেত্রে এটি নারী প্যাটার্ন টাক নামে পরিচিত।

অন্যদিকে অ্যালোপেসিয়া আরিয়াটা বা স্পট বল্ডনেস হলো আরও একটি কারণ, যার ফলে ইমিউন সিস্টেম চুলের ফলিকলকে আক্রমণ করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় চুলের বৃদ্ধি।
অ্যালোপেসিয়া আমাদের জীবনে হুমকি হয়ে দেখা না দিলেও আত্মবিশ্বাস ও মানসিক সুস্থতার ওপর খুব প্রভাব ফেলতে পারে। অ্যালোপেসিয়ার ধরন আর কারণের ওপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা কেমন হবে।

যদি হঠাৎ করে গোছা গোছা চুল পড়ে, কয়েক সপ্তাহ ধরে অতিরিক্ত চুল পড়ে বা চুল পড়ার সঙ্গে চুলকানি, লালচে ভাব বা ব্যথা থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসক দেখান। পরিবারে এ সমস্যার ইতিহাস, ক্লান্তি, ওজন পরিবর্তনের মতো উপসর্গ বা আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেললে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন জাগে, অ্যালোপেসিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার পর কি চুল আবার গজাবে? এটি নির্ভর করে আদতে কারণ ও ধরনের ওপর। মানসিক চাপ, অসুস্থতা বা কিছু ওষুধের কারণে সাময়িক চুল পড়া ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে অ্যালোপেসিয়া আরিয়াটার মতো অটোইমিউন ডিজিজের ক্ষেত্রে চুল আবার গজাতে পারে, কিন্তু তা অনিশ্চিত এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।

অন্যদিকে ক্ষতস্থানযুক্ত অ্যালোপেসিয়ার ক্ষেত্রে চুলের ফলিকল স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চুল সাধারণত আর গজায় না। তবে প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে আর উন্নত চিকিৎসা নিতে পারলে চুল ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চুল পড়া রোধ করার ক্ষেত্রে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। ঘরোয়া প্রতিকার চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখার একটি প্রাকৃতিক উপায় এবং কিছু ক্ষেত্রে চুল পড়া ধীর করতে সাহায্য করে। নারকেল তেল, পেঁয়াজের রস, রোজমেরি তেল ইত্যাদি মাথার ত্বক পুষ্ট করে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এসব অ্যালোপেসিয়া নিরাময় করবে, এমনটা না-ও হতে পারে, তবে মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে পারে এবং চিকিৎসার সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। চলুন কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের কথা জানা যাক।

নারকেল তেল মাথার ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে এবং চুলের গোড়া শক্ত করে। আর পেঁয়াজের রসে আছে সালফার ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা হেয়ার ফলিকল জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

ব্যবহারের উপায়
২ টেবিল চামচ নারকেল তেল হালকা গরম করুন, ১-২ টেবিল চামচ তাজা পেঁয়াজের রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে হালকা করে মালিশ করুন। ৩০-৬০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন (পেঁয়াজের গন্ধ কমাতে হয়তো দুবার ধুতে হবে)। সপ্তাহে একবার নিয়মিত প্রয়োগ করুন।

রোজমেরি তেল চুলের জন্য বেশ উপকারী। এর আরামদায়ক ও উদ্দীপক গুণ মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের পুনরুজ্জীবনে সহায়তা করে।

ব্যবহারের উপায়
৫-৬ ফোঁটা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল ২ টেবিল চামচ জোজোবা (সঠিক উচ্চারণ হোহোবা) বা বাদামের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে কয়েক মিনিট মালিশ করুন। ৩০-৪৫ মিনিট কিংবা আপনার কাছে আরামদায়ক মনে হলে সারা রাত রেখে দিন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক-দুবার ব্যবহার করলে পার্থক্য বুঝতে পারবেন।

ডিমে প্রচুর প্রোটিন, বায়োটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আছে, যা শক্ত ও উজ্জ্বল চুলের জন্য অপরিহার্য। ডিমের মাস্ক আরেকটি জনপ্রিয় প্রতিকার।

ব্যবহারের উপায়
একটি ডিমের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত লাগান। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে ২০-৩০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং হালকা শ্যাম্পু করুন। প্রতি ১০ দিনে একবার ব্যবহার করলে ভঙ্গুর চুল শক্ত হয়।

জবা ফুল ও পাতা ভিটামিন সি ও অ্যামিনো অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা চুল শক্ত করে, ভাঙন কমায় এবং প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ব্যবহারের উপায়
কয়েকটি জবা ফুল ও পাতা বেটে পেস্ট করুন, সামান্য পানি বা নারকেল তেল মিশিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে লাগান। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ গ্রিন টি মাথার ত্বক ঠান্ডা রাখতে ও চুল পড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ব্যবহারের উপায়
২ কাপ গরম পানিতে ২টি গ্রিন টি ব্যাগ ডুবিয়ে রাখুন, ঠান্ডা হলে শ্যাম্পুর পর মাথার ত্বকে ঢালুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু-তিনবার চেষ্টা করুন।

১. বায়োটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডিম, বাদাম, শাকসবজি খান
২. আয়রন ও জিংকের জন্য ডাল, কুমড়ার বীজ, গোটা শস্য যুক্ত করুন
৩. পর্যাপ্ত পানি খান, ভালো ঘুমান
৪. মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রে হাঁটা, ডায়েরি বা জার্নালে কিছু লেখা, শ্বাসের ব্যায়াম আপনাকে সাহায্য করতে পারে

সূত্র: মায়ো ক্লিনিক

Lading . . .