Advertisement

যতীন সরকারকে শেষবিদায় জানালেন ময়মনসিংহের মানুষ, আজ রাতে নেত্রকোনায় শেষকৃত্য

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারকে শেষবিদায় জানিয়েছেন ময়মনসিংহের মানুষ, যেখানে তিনি তাঁর কর্মময় জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়েছেন। এরপর তাঁর মরদেহ নিয়ে নেত্রকোনার উদ্দেশে যাত্রা করেন স্বজনেরা। আজ বুধবার রাতেই সেখানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

আজ বেলা পৌনে তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যান অধ্যাপক যতীন সরকার।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম জানান, অধ্যাপক যতীন সরকার ৮ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি কিডনির রোগ, নিউমোনিয়া ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় আইসিইউয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ বেলা পৌনে তিনটায় মারা যান।

বিকেল চারটায় ময়মনসিংহ নগরের হরিকিশোর রায় রোডের উদীচী কার্যালয়ে যতীন সরকারের মরদেহ নেওয়া হয়। এ সময় তাঁর মরদেহ জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা শেষে তাঁর মরদেহ নিয়ে নেত্রকোনার উদ্দেশে যাত্রা করেন স্বজনেরা। তাঁর মরদেহবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হয়।

যতীন সরকারের মেয়ে সুদীপ্তা সরকার বলেন, ‘কারও স্থান কেউ পূরণ করতে পারে না। সাহিত্য অঙ্গনসহ সব অঙ্গনেই অপূরণীয় ক্ষতি হলো। আমরা বাবাকে হারালাম, বাবা থাকবে না, এটি মানাটা খুবই কঠিন। আমার বাবা বর্ণাঢ্য জীবন কাটিয়েছেন, কর্মময় জীবন কাটিয়েছেন, স্ট্রাগলের জীবন কাটিয়েছেন।’

ছেলে সুমন সরকার জানান, তাঁর বাবার মরদেহ প্রথমে নেত্রকোনার বাসায় নেওয়া হবে। সেখান থেকে নেওয়া হবে নেত্রকোনা শহীদ মিনারে। নেত্রকোনাতেই আজ রাতে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

যতীন সরকার ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনার কেন্দুয়ার চন্দপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক সুদীর্ঘকাল ধরে মননশীল সাহিত্যচর্চা, বাম রাজনীতি ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দুই মেয়াদে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য ভূমিকা ছিল।

৪২ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা পেশায় থেকে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণের পর যতীন সরকার স্ত্রী কানন সরকারকে নিয়ে শিকড়ের টানে চলে যান নিজ জেলা নেত্রকোনায়। তিনি সেখানে শহরের সাতপাই এলাকার নিজ বাড়িতেই থাকতেন।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রোকনুজ্জামান সরকার বলেন, ‘যতীন স্যার বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেছেন। তিনি সমাজের অনেক অন্ধকারে আলো দান করেছেন, অনেক জ্ঞানী ছাত্র তৈরি করেছেন এবং সমাজ পরিবর্তনের জন্য সব সময় সংগ্রাম করেছেন।’

জেলা উদীচীর সহসভাপতি সারোয়ার কামাল বলেন, ‘তাঁর বিয়োগে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হলো, তা পূরণ করার মতো বিকল্প কোনো লোক আমাদের নেই।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি এমদাদুল হক (মিল্লাত), গবেষক ও শিক্ষক স্বপন ধর, মুক্তিযোদ্ধা বিমল পালসহ অসংখ্য মানুষ যতীন সরকারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

Lading . . .