অসুস্থ স্ত্রী ইজিবাইক থেকে লাফ দিয়েছিলেন, বাঁচাতে গিয়ে স্বামীর মৃত্যু
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫

অসুস্থ স্ত্রীকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন আছর উদ্দিন (৪০)। পথে হঠাৎ তাঁর স্ত্রী চলন্ত ইজিবাইক থেকে লাফ দেন। স্ত্রীকে বাঁচাতে তিনিও লাফিয়ে পড়েন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে আছর উদ্দিনের মৃত্যু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আছর উদ্দিন উপজেলার খারনই ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের মৃত তহুর উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আছর উদ্দিন স্ত্রী শাহিনা আক্তার কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি মাঝেমধ্যে কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান। গতকাল বিকেলে বাড়ি থেকে আছর উদ্দিন ইজিবাইকে করে স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলার কেবলপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন। সেখানে শাহিনাকে কিছুদিনের জন্য রেখে আসার কথা ছিল। পথে লেঙ্গুরা বাজার এলাকায় শাহিনা হঠাৎ ইজিবাইক থেকে লাফ দেন। এ সময় স্ত্রীকে বাঁচাতে আছর উদ্দিনও তড়িঘড়ি লাফ দেন। এ ঘটনায় সড়কের ওপর পড়ে গুরুতর আহত হন আছর উদ্দিন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় শাহিনাও সামান্য আহত হন। তাঁকে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লেঙ্গুরা বাজারের ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, ‘ইজিবাইকটিতে চালকসহ চারজন যাত্রী ছিলেন। আছর উদ্দিন ও শাহিনা আক্তার দম্পতি পেছনের আসনে বসেছিলেন। হঠাৎ শাহিনা ইজিবাইক থেকে লাফ দিয়ে পড়ে যান। তাঁকে রক্ষা করতে স্বামী আছর উদ্দিনও লাফ দিয়ে পড়ে যান। এতে তিনি মাথায় ও শরীরে প্রচণ্ড আঘাত পান। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি মারা যান। শুনেছি, শাহিনা বেশ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ। নিজের জীবন দিয়ে অসুস্থ স্ত্রীকে বাঁচিয়েছেন আছর উদ্দিন।’
কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই আছর উদ্দিন মারা যান।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান আজ শুক্রবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কোনো অভিযোগ না থাকায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আছর উদ্দিনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।