Advertisement

ফায়ার ফাইটার শামীমকে অশ্রুসিক্ত বিদায়

যুগান্তর

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ছবি: যুগান্তর
ছবি: যুগান্তর

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফায়ার সার্ভিস কর্মী শামীম আহমেদ। তার মৃত্যুর খবরে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের পিজাহাতিতে চলছে শোকের মাতম।

বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দুই সপ্তাহ আগে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতি গিয়েছিলেন ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ। কর্মস্থল থেকে তিনদিনের ছুটি নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি মায়ের কাছে পৌঁছান। সেখানে তিন রাত কাটিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে আবার কর্মস্থল টঙ্গীতে ফিরে যান। কথা ছিল মাসখানেক পর আবার বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু তার সেই ইচ্ছা আর পূরণ হলো না।

গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি রাসায়নিকের গুদামে আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়ার একদিন পর মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় বার্ন ইউনটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শামীম। তার মৃত্যুর খবরে পরিবার ও স্বজনদের পাশাপাশি গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

পরিবার ও প্রতিবেশীরা বলেন, এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের একমাত্র ভরসা হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা, একমাত্র বোন ও বড় ভাইয়েরা। তাদের আহাজারিতে আশপাশের লোকজনও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।

শামীম আহমেদ উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের পিজাহাতি গ্রামের প্রয়াত আবদুল হামিদের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০০ সালে কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর তিনি কেন্দুয়া কলেজে ভর্তি হন। এর এক বছর পর বাবা মারা গেলে দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ২০০৪ সালের ১৬ আগস্ট তিনি ফায়ার সার্ভিসের চাকরিতে যোগ দেন।

ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম ছিলেন সবার ছোট। তার অন্য ভাইয়েরা কৃষিকাজ করেন। বোন রিতা আক্তার বাবার বাড়িতেই থাকেন।

২০১০ সালে শামীমের সঙ্গে একই উপজেলার ডাইকি গ্রামের মনিরা আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের ১১ বছরের ছেলে নাবিল আহমেদ, ৯ বছরের মেয়ে হুমায়রা আক্তার এবং তিন বছরের মেয়ে ওহি আক্তার আছে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি গাজীপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

টঙ্গীতে রাসায়নিকের গুদামে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মী শামীম আহমেদের মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোক।

শামীমের বাল্যবন্ধু মানিক মিয়া বলেন, আমরা একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। শামীম ছোটবেলা থেকেই খুব পরোপকারী ও বিনয়ী ছিল। তাকে কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখিনি। সব সময় মানুষের উপকারে এগিয়ে যেত। তার মৃত্যুতে আমরা যেমন শোকাহত, তেমনি গর্বিতও। কারণ সে মানুষের জানমাল রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছে। তবে সরকারের উচিত তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। তার পরিবার তেমন সচ্ছল নয়।

শামীম আহমেদের বড় ভাই সবুজ মিয়া বলেন, শামীমের লাশ মঙ্গল রাতে বাড়িতে আনা হয়। বুধবার সকাল পৌনে ১১ টার দিকে পিজাহাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

জানা যায়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) পূর্ণ চন্দ্র, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার, নেত্রকোনা জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী, কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া দুলালসহ নিহত ফায়ার ফাইটার শামীমের পরিবার, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী অংশ নেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, শামীম দেশের সম্পদ রক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার এই আত্মত্যাগ দেশের মানুষ মনে রাখবে। সরকারের পক্ষ থেকে তার পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) পূর্ণ চন্দ্র বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে তার পরিবারের সদস্যদের। এরমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন।

Lading . . .