ময়মনসিংহে দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ঘোড়ার খামার
প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫

ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বেগুনবাড়ী ইউনিয়নের কোকিল গ্রামে মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম সঞ্জুর হাতে গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ঘোড়ার খামার। খামারটির নাম সঞ্জু হর্স ফার্ম। খামারের মালিক সঞ্জু অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাশ করেছেন। তিনি স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুরুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে দেশ ও বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা দ্রুতগতির ১০টি ঘোড়া। এ খামারে রয়েছে সিন্দি, মারোয়াড়ি ও নোকড়া জাতের চোখ জুড়ানো ঘোড়া। প্রতিটি ঘোড়ার মূল্য ২ থেকে ৫ লাখ টাকা।
জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই সঞ্জু ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণ করতেন। আর এ কারণেই ২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে মায়ের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে একটি ঘোড়া কিনে শুরু করেন রেস। এতে তিনি সফল হন। দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত রেসে অংশ নিয়ে তিনি অর্জন করতে থাকেন পুরস্কার। তবে এর কিছুদিন পর হঠাৎ তার সেই প্রিয় ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এতে সঞ্জু মর্মাহত হলেও স্বপ্ন তাকে আরও বড় কিছু করার আত্মবিশ্বাস জোগায়। এরপর ২০২১ সালে ভারতের রাজস্থান ও পাঞ্জাব থেকে আবারও সিন্দি, মারোয়াড়ি ও নোকড়া জাতের কয়েকটি ঘোড়া কিনে শুরু করেন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সঞ্জু হর্স ফার্ম নামে দেশের প্রথম ঘোড়ার খামার।
সঞ্জু জানান, ঘোড়া পালনের কারণে প্রথম দিকে এলাকার লোকজন তাকে নিয়ে ঠাট্টা ও হাসাহাসি করত। কিন্তু এখন প্রতিদিনই এলাকাবাসী ছাড়াও দেশের নানা প্রান্ত থেকে লোকজন আসে এ ঘোড়ার খামার দেখতে ও ঘোড়া কিনতে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী ও আনসার একাডেমি এ খামার থেকে ঘোড়া সংগ্রহ করেছে। এছাড়া শখের বশে উচ্চবিত্তরাও কিনে নিচ্ছে এসব ঘোড়া। তিনি বলেন, ঘোড়াকে আপনি যা শেখাবেন তা-ই শিখবে। এ ঘোড়া নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে। সঞ্জু বলেন, ঘোড়দৌড় ছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা। কিন্তু বর্তমানে রেসের জন্য ভালো মানের ঘোড়া দেশে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় মারোয়াড়ি ও সিন্দি এই দুই জাতের ঘোড়াই রেসের জন্য উত্তম। এ আবহাওয়ায় তাদের রোগবালাই কম হয়ে থাকে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ঘোড়ার খামার খুবই সম্ভাবনাময়। দেশে ঘোড়ার চাহিদা থাকলেও নেই খামার। ফলে প্রতিবছর বিদেশ থেকে ঘোড়া আমদানি করতে হয়। এখন দেশের সরকার যদি আমাকে সহযোগিতা করে তাহলে দেশেই ভালো মানের ঘোড়া উৎপাদন করা সম্ভব। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও ঘোড়া রপ্তানি করতে পারব।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম বলেন, ঘোড়ার খামারির সঙ্গে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ঘোড়াগুলোকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়া খামার মালিককে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।