Advertisement

পথে পথে ঘুরে বেড়ানো ‘পাগলির’ ফুটফুটে সন্তান পেল নতুন ঠিকানা

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

ময়মনসিংহের ফুলপুরে পথে পথে ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর জন্ম দেওয়া শিশুটিকে নতুন পরিবারে হস্তান্তর করা হয়েছে। শিশুটির সুন্দর ভবিষ্যৎ ও মানসিক ভারসম্যহীন মায়ের অবস্থা বিবেচনায় একটি পরিবারকে তার অভিভাবকত্ব দেওয়া হয়।

লক্ষ্মীপুরের এক ব্যাংক কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রীর হাতে ফুলপুর উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ড আজ মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে শিশুটিকে হস্তান্তর করে।

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী বছরখানেক ধরে ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর বাজার ও আশপাশের এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন, রাস্তায় রাত যাপন করতেন। প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ২০ আগস্ট বিকেলে সিংহেশ্বর ইউনিয়নের ডুবার পাড় বাজারসংলগ্ন নবী হোসেনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন।

খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সেদিন রাত ১০টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম অ্যাম্বুলেন্স ও লোক পাঠিয়ে নবজাতক ও মাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর পক্ষে শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখা ও বড় করে তোলা কঠিন। এ অবস্থায় শিশুটির নতুন একটি ঠিকানায় পাঠাতে সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ড। শিশুটির অভিভাবকত্ব নিতে ২৪টি নিঃসন্তান দম্পতি আবেদন করে প্রশাসনের কাছে। পরে সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে লক্ষ্মীপুরের এক ব্যাংক কর্মকর্তার পরিবারে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তার বয়স ৪০ এবং তাঁর স্ত্রীর বয়স ৩২। চিকিৎসক জানিয়েছেন, কিছু শারীরিক জটিলতার কারণে এই দম্পতির সন্তান নেওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় পেশা ও পরিবারটির অবস্থা বিবেচনা করে উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ড শিশুটিকে এই পরিবারে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবারটি শিশুর নামে সাত লাখ টাকার ব্যাংক ডিপিএস করে দিয়েছে। এ ছাড়া শর্ত অনুযায়ী, তাঁরা ৪ মাস পরপর ২ বছর পর্যন্ত এবং ১৮ বছর পর্যন্ত ১ বছর পরপর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে শিশুটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন দিয়ে যাবেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ‘শিশুটির মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে চিকিৎসার জন্য আজ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে জানানো হলে আমরা তাঁকে ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করব।’

ইউএনও সাদিয়া ইসলাম বলেন, ‘শিশুটিকে নিতে যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের সাক্ষাৎকার শেষে প্রাথমিকভাবে তিনজনকে আমরা বাছাই করি। পরে তাঁদের আর্থিক, পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় শিশুটির সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আশা করছি, শিশুটি নতুন ঠিকানায় সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠবে।’

Lading . . .