পৃথিবীর ৬০ শতাংশ ভূমি প্রাণ বিকাশের জন্য অনিরাপদ
প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিজ্ঞানীরা নতুন এক সতর্কতা নিয়ে আলাপ করছেন। মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ব্যবস্থা পতনের খুব কাছাকাছি চলে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, পৃথিবীর মোট ভূমির ৬০ শতাংশ এখন বিপৎসীমার বাইরে চলে গেছে। এসব এলাকায় স্থিতিশীল বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত বন উজাড়, কৃষিকাজ ও শিল্প প্রসারের কারণে এসব এলাকার বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তা, পানির সরবরাহ ও জলবায়ু ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন, পানি ও নাইট্রোজেন চক্রের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা এই ক্ষতির শিকার সবচেয়ে বেশি।
বৈজ্ঞানিকভাবে নিরাপদ অঞ্চল বলতে এমন পরিবেশগত সীমানাকে বোঝানো হয়, যার ভেতরে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ব্যবস্থা গুরুতর ব্যাঘাত ছাড়াই কাজ করতে পারে। প্রাণের অখণ্ডতা বা বায়োস্ফিয়ার ইন্টিগ্রিটি হিসেবে বিষয়টি বলা হয়। গাছপালা, প্রাণী ও প্রাকৃতিক বিভিন্ন চক্র ও প্রক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতাকে গুরুত্ব দেয়। সাধারণভাবে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে গাছপালা কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে ও বাস্তুতন্ত্রজুড়ে শক্তির প্রবাহ বজায় রাখে। এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় কার্বন, পানি এবং নাইট্রোজেন চক্র নিয়ন্ত্রিত হয়। এসব চক্র পৃথিবীতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যখন বন ধ্বংস করা হয়, জলাভূমি শুকিয়ে যায় ও কৃষিভূমি অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রসারিত হয় তখন বিভিন্ন চক্র ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
জার্মানির পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ ও ভিয়েনার বোকু ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণাটি ওয়ান আর্থ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ১৬০০ সাল পর্যন্ত ঐতিহাসিক ডেটা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা পৃথিবী কতটা নিরাপদ তা মূল্যায়ন করেছেন। ১৯০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর প্রায় ৩৭ শতাংশ ভূমি অনিরাপদ অঞ্চল হয়ে ওঠে। তখন ১৪ শতাংশ ছিল উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বর্তমানে ৬০ শতাংশ এলাকা অনিরাপদ ও ৩৮ শতাংশ এলাকা উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অঞ্চলে ১৬০০ সাল থেকে শিল্পায়ন, কৃষির প্রসার ও বন উজাড়ের মতো কর্মকাণ্ড প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে। বনভূমি এবং তৃণভূমিকে কৃষিভূমিতে রূপান্তরিত করা আর জলাভূমির ক্ষতিই পরিবেশগত পতনের প্রধান কারণ। বিজ্ঞানী ফ্যাবিয়ান স্টেনজেল বলেন, খাদ্য উৎপাদন, উপকরণ ও জৈবশক্তির কারণে জৈববস্তুর জন্য মানুষের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। পটসডাম ইনস্টিটিউটের আর্থ সিস্টেম অ্যানালাইসিস বিভাগের বিজ্ঞানী উলফগ্যাং লুচট বলেন, অতিরিক্ত চাহিদা প্রাকৃতিক শক্তির প্রবাহকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরও পড়ুন