প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

উগো একিটিকে ও তার সতীর্থদের উদযাপন তখনও শেষ হয়নি। গ্যালারির গর্জনও চলছে। এর মধ্যেই ভিন্ন অনুভূতির স্রোত। রেফারি উঁচিয়ে ধরলেন হলুদ কার্ড, একিটিকের যেটি দ্বিতীয়! দলকে এগিয়ে দেওয়ার উল্লাস থামিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো তাকে। তাতে বদলে গেল কোচের প্রতিক্রিয়াও। জয়সূচক গোল করার প্রশংসা পাবেন কী, লাল কার্ডের জন্য এই স্ট্রাইকারকে একহাত নিলেন লিভারপুলের কোচ আর্না স্লট।
ইংলিশ লিগ কাপের এই ম্যাচে মঙ্গলবার সাউথ্যাম্পটনকে ২-১ গোলে হারায় লিভারপুল।
ঘরের মাঠে ৪৩তম মিনিটে লিভারপুলকে এগিয়ে দেন আলেকাসান্দার ইসাক। ট্রান্সফার ফির রেকর্ড গড়ে এই মৌসুমে দলে আসা সুইডিশ ফরোয়ার্ডের প্রথম গোল এটি নতুন দলের হয়ে। ৭৬তম মিনিটে সমতায় ফেরে সাউথ্যাম্পটন।
ইসাকের বদলি হিসেবে বিরতির পর মাঠে নামা একিটিকে পরে গোল করে আবার এগিয়ে দেন লিভারপুলকে। সেই গোলই গড়ে দেয় ব্যবধান।
নির্ধারিত সময়ের মিনিট পাঁচেক বাকি থাকতে গোলটি করেন একিটিকে। এরপরই ছুটে যান গ্যালারির দিকে। জার্সি খুলে উঁচিয়ে ধরেন দর্শকদের উদ্দেশে। এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায়। জার্সি খোলার জন্য হলুদ কার্ড পেতে হয় তাকে।
একটি হলুদ কার্ড তিনি দেখেছিলেন আগেই। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেয়ে ছাড়তে হয় মাঠ।
লিভারপুলের জয়ের স্বস্তিও তাতে মিইয়ে যায়। বরং তার লাল কার্ডের বিরক্তিই যেন মুখ্য হয়ে ওঠে। অধিনায়ক রবার্ট অ্যান্ডারসন তা লুকালেন না ম্যাচের পর।
“আমি খুবই অবাক হব, যদি সে এই কাজ আবার করে। অযথাই দুটি কার্ড সে হজম করেছে এবং অবশ্যই শনিবারের ম্যাচে তার অভাব অনুভব করব আমরা।”
“তার দিক থেকে স্টুপিডের মতো কাজ হয়েছে। তবে বয়স এখনও কম, সে এখান থেকে শিখবে।”
কোচ আর্না স্লটের প্রতিক্রিয়া ছিল আরও ঝাঁঝালো।

“এটা ছিল অপ্রয়োজনীয় ও নির্বোধের মতো। প্রথম হলুদ কার্ডেরই কোনো দরকার ছিল না এবং এরকম স্টুপিডের মতোই কাজ ছিল, কারণ আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। পরে আবার আরেকটি কার্ড পেয়েছে। আমি জানি, আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন অনেক সময়, তবে সেটা এমনভাবে প্রকাশ করতে হবে যেন হলুদ কার্ডে না গড়ায়।”
একিটিকের গোলটি যদিও দলকে জিতিয়েছে ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, তবে এমন দর্শনীয় কিছু ছিল না। তার ভূমিকাও তেমন একটি ছিল না। বড় কৃতিত্ব সেখানে ছিল রবার্টসন ও ফেদেরিকো চিয়েসার। মাঝমাঠ থেকে অসাধারণ একটি উঁচু শট সামনে বাড়ান রবার্টসন। বক্সের ভেতর সেটি দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নেন চিয়েসা। মূল কাজটি করে দেন তিনিই। পাশে থাকা দুই ডিফেন্ডার ও আগুয়ান গোলকিপারের মাঝ দিয়ে তিনি চমৎকারভাবে বল দেন একিটিকের কাছে। তার কাজ ছিল স্রেফ টোকা দিয়ে ফাঁকা পোস্টে বল পাঠানো।
লিগ কাপের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে এমন গোল করে একিটিকের এরকম বাঁধনহারা উদযাপনও মানতে পারছেন না স্লট।
“প্রথম হলুদ কার্ড যদি নাও পেত, তার পরও দ্বিতীয়টি স্টুপিডের মতোই হতো। আমি তাকে বলেছি, যদি তুমি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ৮৭তম মিনিটে তিনজনকে কাটিয়ে দারুণ গোল করতে পারো, তাহলে হয়তো এরকম উদযাপন বুঝতে পারতাম। আমিও কিছু গোল করেছি, যদিও এই পর্যায়ে নয়…।”
“হতে পারে, আমি পুরোনো ঘরানার, পুরোনো ধ্যান-ধারণার লোক। তবে আমি তাকে বলেছি, আজকের মতো এরকম ম্যাচে এমন গোল করলে আমি স্রেফ ঘুরে ফেদেরিকো চিয়েসার দিকে এগিয়ে স্রেফ বলতাম, ‘দারুণ অ্যাসিস্ট করেছো, দুর্দান্ত ছুটেছো, আমার খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন হয়নি। গোলের সবটুকুই তোমার কৃতিত্ব।’ কিন্তু সে করেছে নির্বোধের মতো কাজ, স্মার্ট কিছু নয়। এখন শনিবারের ম্যাচে তাকে পাব না, দলের জন্য যা আদর্শ নয়।”
শনিবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ক্রিস্টাল প্যালেসের মাঠে লড়বে শীর্ষে থাকা লিভারপুল।
একিটিকে পরে সামাজিকমাধ্যমে দুঃখপ্রকাশ করেছেন সমর্থকদের কাছে, “আজকে রাতে আবেগের কাছে খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। লিভারপুল পরিবারের সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি…।”