কাজ না করেই ঘরে বসে বেতন-ভাতা নেন স্বাস্থ্যকর্মী ফারহানা
প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫

এক মাস কিংবা দুই মাস নয়, টানা এক বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও সরকারি বেতন-ভাতা এবং সব সুবিধা ভোগ করছেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের আউদত কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) ফারহানা বেগম।
অভিযোগ রয়েছে, অসুস্থতার অজুহাতে কাজ না করে তিনি অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও সরকারি বেতন-ভাতা তুলছেন নিয়মিত। রোগীরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে দিনের পর দিন ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে।
সূত্র জানায়, ফারহানা বেগম জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর শাড়পাড়া ইউনিয়নের আফজল গ্রামের আবদুল আজাদের মেয়ে। তিনি ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর চাকরিতে যোগদানের পর থেকে দীর্ঘদিন অনিয়মিত। ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত তিনি ক্লিনিকে সেবাদানে অনুপস্থিত ছিলেন।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার অনুপস্থিতি নিয়ে একাধিকবার ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও, তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে তদবির করান বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফারহানাকে একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে। তবে সর্বশেষ শোকজের তারিখ কর্তৃপক্ষ জানাতে পারেনি।
জানা গেছে, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসাররা পরিদর্শনে গিয়ে ফারহানা বেগমকে ক্লিনিকে অনুপস্থিত পান। পরিদর্শন শেষে অনুপস্থিতি, অব্যবস্থাপনা ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে তাকে শোকজ করা হয়। তবে শোকজের পরও তিনি কর্মস্থলে ফিরে আসেননি।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকের দরজা খোলা থাকলেও ভেতরে কেউ নেই। সিএইচসিপি ফারহানা বেগম অনুপস্থিত।
ক্লিনিকের সামনে বসে থাকা কয়েকজন রোগী বলেন, ‘ফারহানা ম্যাডাম এক বছর ধইরা নাই। একজন পুরুষ আসে কয়দিন ধইরা, সে এখন চা খাইতে গেছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লিনিক সংলগ্ন এক দোকানদার বলেন, ‘সরকারি চাকরি করেন কিন্তু গত এক বছর অফিসে নাই ফারহানা বেগম। বেতন-ভাতা তো পাইতেছেন নিয়মিতই। তার জন্যই এলাকার মানুষ সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।’
হাসপাতালের অফিস সহকারী ফয়ছল আহমেদ তথ্য দিতে গড়িমসি করে বলেন, আমার কাছে তথ্য নেই, পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
অভিযুক্ত ফারহানা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কৃপেশ চন্দ্র রায় কালবেলাকে বলেন, ফারহানাকে অনুপস্থিতির কারণে একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যোগ না দেওয়ায় আমি গত ৭ জুলাই আবার নোটিশ করেছি। তবে এতদিন তিনি কেন অফিস করেননি জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়ে জানান—তিনি অসুস্থ ছিলেন। তবে জুলাই মাস থেকে তার বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, তার মেডিকেল ছুটি থাকতে হবে। কোনো ডকুমেন্ট না থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি চাকরি না করে বেতন নিতে পারবেন না।