সিলেটে টিলা কাটা ঠেকাতে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ প্রশাসনের, অভিযান অব্যাহত
প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
গুগল ম্যাপে সিলেটের টিলাগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি কেউ এসব কাটলে অনলাইনে যেন বিষয়টি দেখে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেবে প্রশাসন। এ ছাড়া টিলার তালিকা হালনাগাদের পাশাপাশি ট্রাকচালকেরা যেন টিলা কাটার মাটি পরিবহন না করেন, সে জন্য সচেতনতা বৈঠকও করা হবে।
আজ সোমবার বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত সিলেট সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপজেলা পরিষদের মিনি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ‘টিলা কাটা, টপ সয়েল কাটা ও অনুমোদনহীন বালু উত্তোলন রোধে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা’য় সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ।
এদিকে আজ দিনব্যাপী সিলেট মহানগরের আওতাধীন তারাপুর চা-বাগান, জগদীশ টিলা, হাওলদারপাড়া, মজুমদার টিলাসহ একাধিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত টিলা কাটা রোধে অভিযান চালিয়েছেন। এতে নেতৃত্ব দেন সিলেট মহানগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ খান। এ সময় খাদিমনগর চা-বাগানে টিলা ও টিলার গাছ কাটায় একজনকে এক সপ্তাহের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুজনের নামে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। সুপারিশগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে গুগল ম্যাপে সিলেটের টিলাগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করার পাশাপাশি কেউ এসব কাটলে অনলাইনেই যেন বিষয়টি দেখা যায়, সে ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া; সিটি করপোরেশন এলাকায় টিলা কাটা রোধে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সংযুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে চিঠি দেওয়া এবং টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা নির্ধারণ করা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া উপজেলা ও মহানগরে অবস্থিত টিলার তালিকা তৈরির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
বৈঠকে ট্রাকমালিক–শ্রমিকদের সঙ্গে পৃথক একটি আলোচনা সভা করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। ওই সভায় মালিক-শ্রমিকদের টিলা কাটার মাটি পরিবহন না করার অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া পরিবেশ আইন সংশোধন এবং পুলিশকে টিলা কাটা প্রতিরোধের বিষয়ে ক্ষমতায়িত করার সুপারিশ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে।
বৈঠকে সিলেট মহানগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ খান, সিলেট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশীদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়কারী শাহ সাহেদা আখতার, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী কিমসহ একাধিক জনপ্রতিনিধি ও চা-বাগানের ব্যবস্থাপকেরা উপস্থিত ছিলেন।
গত শনিবার প্রথম আলোয় ‘সিলেটে পাথরের পর টিলাও সাবাড়’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই স্থানীয় প্রশাসন টিলাকর্তনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রোববার সিলেট সদর উপজেলার ১৪টি স্থানে টানা সাড়ে ৫ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই ধারাবাহিকতায় আজও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান।