Advertisement

মোহনীয় জাদুতে ঘেরা ক্যামেলিয়া লেক

জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

মোহনীয় জাদুতে ঘেরা ক্যামেলিয়া লেক
মোহনীয় জাদুতে ঘেরা ক্যামেলিয়া লেক

আশরাফুল ইসলাম আকাশ

ভরদুপুর। প্রখর রোদ বলছে ধরণীতে এখন গ্রীষ্মের রাজত্ব। সূর্যের তেজে শরীরটা চিটচিট করছে। ঘড়ির কাঁটা তখন দুইটার কাছাকাছি। এর মধ্যেই সিলেট সদরের কদমতলী থেকে বাস ছুটলো মৌলভীবাজারের উদ্দেশে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার যাত্রা শেষে পৌঁছলাম মৌলভীবাজার। হালকা মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে সূর্য মামা। ক্ষুধার্ত পেট আর কিছু মানছে না। বিলম্ব না করে হোটেল পানসিতে বসে দুপুরের খাবার সেরে ফেললাম। এবার শমসেরনগর রওয়ানা দেওয়ার পালা।

সিএনজি চালিত যানে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে ভাড়া। আধা ঘণ্টা পর সমশেরনগর রেলস্টেশনে এসে পৌঁছলাম। সেখান থেকে কিছুটা পথ এগিয়ে চার রাস্তার মোড়ে গিয়ে উঠলাম ব্যাটারিচালিত রিকশায়। গন্তব্য ক্যামেলিয়া ডানকান লেক। প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। ছোট ছোট টিলা কেটে করা হয়েছে চলাচলের পথ। পাকা সরু রাস্তাগুলো যেন অজগর সাপ হয়ে ধরা দিচ্ছে। ডান কিংবা বাম যেদিকে তাকাই, শুধুই চা বাগান। দীর্ঘ পথের ব্যবধানে দু-একটা করে ঘর আর টং দোকান। এসব দেখতে দেখতে চলে এলাম পঞ্চাশ শয্যাবিশিষ্ট ক্যামেলিয়া ডানকান হসপিটালের অভিমুখে।

ঠিক এখান থেকেই শুরু চির সবুজের চোখ ধাঁধানো চা বাগানের একাংশ। চোখ দুটো যত দূরেই যাচ্ছে; ততই যেন সীমানা খোঁজার চেষ্টা করছে। চোখ গেলো ফসলের মাঠে, বক আর মহিষের বন্ধুত্বের খুনসুঁটির দিকে। মহিষ আপন মনে ঘাস চিবিয়ে যাচ্ছে আর বক হালকা আঁচে রোদ পোহাচ্ছে।

মোহনীয় জাদুতে ঘেরা ক্যামেলিয়া লেক

মোহনীয় জাদুতে ঘেরা ক্যামেলিয়া লেক

ক্যামেলিয়া লেকে যাওয়ার সময় খুব বেশি একটা ছবি তোলা হয়নি। নয়নাভিরাম এই দৃশ্য খালি চোখে না দেখে ক্যামেরাবন্দি করলে মানায় না। কাঁচা সড়ক ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলাম ক্যামেলিয়া লেকে। কেউ এই লেকটিকে ক্যামেলিয়া লেক বলেন, আবার অনেকেই বিসলারবান নামেও চেনেন।

নাম যেমনই হোক, ছবির মতো এই লেক দেশে হাতেগোনা কয়েকটি থাকতে পারে। প্রকৃতির এমন অচেনা শহরে মনকে দোলা দেবে, হৃদয় জুড়িয়ে দেবে। লেকের পাশে, ঘাসের ওপরে বসে চারপাশ দেখছি। জনশূন্য এই জায়গায় কী এক অজানা রহস্য যেন লুকিয়ে আছে। চারপাশ মায়া আর অচেনা গন্ধে ঘিরে আছে চা বাগানটিকে। লেকের কোলঘেঁষে মাঝে মধ্যে দু’একজন চা-শ্রমিক হেঁটে যাচ্ছেন।

সূর্য কিছুটা লাল আভা ধারণ করেছে। ধীরে ধীরে হেলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে। এই সময় একদল দর্শনার্থী ভিড় করেছে। তারা নিজেদের মতো হাসি-ঠাট্টা আর আড্ডায় মেতেছে। হঠাৎ করেই চোখে গেলো দূরের চা বাগানে। মাটির তলদেশ থেকে চার মাথা বের করে পানি ছিটিয়ে চা পাতাগুলো সতেজ করে যাচ্ছে কৃত্রিম মেশিন। চায়ের গাছগুলো দুই-আড়াই ফুটের মতো উঁচু। কিন্তু বয়স যে তার বেশ হয়েছে; সেটা ডালপালা দেখলেই বোঝা যায়।

মোহনীয় জাদুতে ঘেরা ক্যামেলিয়া লেক

মোহনীয় জাদুতে ঘেরা ক্যামেলিয়া লেক

লেকের পাশে ছোট করে একটা ছাউনি আর একটা সিঁড়ি বানিয়ে রেখেছেন ক্যামেলিয়া ডানকান কর্তৃপক্ষ। যে কোনো দর্শনার্থী এলে যেন সিঁড়ির ধারে বসে বা দাঁড়িয়ে এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। লেকের এপাশ থেকে ওপাশ দেখা যাচ্ছে। উঁচু-নিচু টিলার মাঝে ছোট খুপড়ির টিনের চালের একটি করে ঘর। এর পাশ দিয়ে কাঁটাতারের সীমানা বেঁধে দেওয়া। ছবির মতো একটা দর্শনীয় স্থান। যেখান থেকে প্রস্থান নিতে চায় না মন।

ওদিকে আবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসার সময় হয়েছে। পাখিদের কলরব ও গুঞ্জনের শব্দ বাড়তে শুরু করছে। নিজদের আবাসস্থল খুঁজে নিয়ে বিশ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। সঙ্গে আবার ঝিঁঝিঁ পোকাগুলো ডাকছে, মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম তাদের আমন্ত্রণের ভাষা।

আবারও সেই সরু পথ ধরে বেরিয়ে যাচ্ছি। শেষ মুহূর্তে চোখে পড়লো তিনজন কাঠুরে মিলে লাকড়ি সংগ্রহ করছেন। পশ্চিম আকাশের সূর্যটি লালচে আকার ধারণ করছে। পশমওয়ালা ভেড়াগুলো ঘরে ফেরার চেষ্টায় এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে আর সামনের দিকে এগোচ্ছে।

বিসলারবান থেকে বেরিয়ে প্রবেশ করলাম ডানকান হাসপাতালে। সেখানে প্রবেশপথেই চোখে পড়লো ‘ছবি তোলা নিষেধ’। এত গোছালো, সুন্দর কোলাহলমুক্ত পরিবেশে স্থান পেয়েছে বিদেশি সংস্থার এই বেসরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে কিছুক্ষণ পর চায়ের দেশের সতেজ পাতায় চুমুক দিয়ে মন জুড়ালাম। চা শেষ করে বেশিক্ষণ সময় নষ্ট না করেই তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। রিকশা ধরে সমশেরনগর বাসস্ট্যান্ড এলাম। এরপরে সিএনজি চালিত যানে নতুন গন্তব্য শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম।

মোহনীয় জাদুতে ঘেরা ক্যামেলিয়া লেক

মোহনীয় জাদুতে ঘেরা ক্যামেলিয়া লেক

যেভাবে যাবেন
রাজধানী থেকে মৌলভীবাজার যাওয়ার জন্য যে কোনো একটি দূরপাল্লার কোচের টিকিট কেটে রওয়ানা দিতে হবে। মৌলভীবাজার পৌঁছানোর পর বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা কিংবা অটোরিকশায় ৩০ টাকা খরচ করে চৌমুহনা নামক স্থানে যেতে হবে। চৌমুহনার চার রাস্তা থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়ায় সিএনজি চালিত যানে শমসেরনগর। রিকশায় ৩০ টাকা ভাড়ায় শমসেরনগর বাজার থেকে ক্যামেলিয়া লেক কিংবা বিসলারবান যেতে হবে।

আমাদের দেশেই আছে চোখজুড়ানো সব জায়গা। যেসব স্থানের পরিবেশ আমাদের অসতর্কতার কারণে নষ্ট হতে পারে। তাই ভ্রমণকালে প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা মাথায় রেখে কাজ করা আমাদের কর্তব্য। সবার ভ্রমণ হোক আনন্দময়।

লেখক: পর্যটক।

Lading . . .