Advertisement

বন্য সৌন্দর্যে ভরা এক অনন্য ভ্রমণ

জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর

প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

বন্য সৌন্দর্যে ভরা এক অনন্য ভ্রমণ
বন্য সৌন্দর্যে ভরা এক অনন্য ভ্রমণ

আমার তানজানিয়া সফরের প্রথম গন্তব্য ছিল মনোমুগ্ধকর তারাঙ্গিরে জাতীয় উদ্যান। পার্কের প্রবেশমুখেই প্রকৃতি যেন এক অনন্য শুভেচ্ছা জানালো। চোখে পড়লো চমৎকার সব পাখি, বিশেষ করে রঙিন ফিশার পাখিরা মন ছুঁয়ে গেলো। এখানে পাখির উপস্থিতি এতই বৈচিত্র্যময় যে, মনে হলো যেন প্রকৃতির গানে ভেসে বেড়াচ্ছে পুরো পরিবেশ।

এ পার্কের আসল বিস্ময় তখনই শুরু হলো; যখন সামনে পড়লো বিশাল এক হাতির পাল। বাচ্চা হাতি থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত, অসংখ্য হাতি একসাথে দেখতে পাওয়ার এ অভিজ্ঞতা আমার জীবনের প্রথম। প্রকৃতির কোলে এত কাছ থেকে হাতির জীবনযাপন দেখা, তাদের চলাফেরা, পরিবারের বন্ধন, সবই এক অবর্ণনীয় অনুভূতি।

এরপর একে একে চোখে পড়লো জিরাফ, জেব্রা এবং অসংখ্য ছোট-বড় বন্যপ্রাণী। যেগুলো এতদিন শুধু ডিসকভারি চ্যানেলে দেখে অভ্যস্ত ছিলাম। আর এখন, সেগুলো আমার সামনে জীবন্ত। এ অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে আজীবন মনে রাখার মতো।

জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে কিছু তথ্য
তারাঙ্গিরে জাতীয় উদ্যান তানজানিয়ার মানিয়ারা অঞ্চলে অবস্থিত এবং এর নামকরণ হয়েছে পার্কের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তারাঙ্গিরে নদীর নামানুসারে। শুষ্ক মৌসুমে জুন থেকে নভেম্বর এ নদী অঞ্চলের প্রাণীদের একমাত্র পানির উৎস হয়ে ওঠে। ফলে এ সময়টাতে হাজার হাজার জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, কেপ বাফেলো, হরিণ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী এখানে জড়ো হয়। যা দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করেন।

বন্য সৌন্দর্যে ভরা এক অনন্য ভ্রমণ

বন্য সৌন্দর্যে ভরা এক অনন্য ভ্রমণ

পার্কটি প্রায় ২,৮৫০ বর্গ কিলোমিটার বা ১১০০ বর্গ মাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূপ্রকৃতির জন্য পরিচিত। গ্রানাইট পাথরের শিলাশিরা, নদী উপত্যকা, জলাভূমি এবং ঋতুভিত্তিক তৃণভূমির মাঝে ছড়িয়ে আছে বাওবাব, অ্যাকাশিয়া ও অ্যাডানসোনিয়া গাছের অসাধারণ সংমিশ্রণ।

প্রাণিজগৎ ও পাখির রাজ্য
পার্কটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো হাতির বিশাল জনসংখ্যা এবং বাওবাব গাছের ঘনত্ব। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন শুধু এ মহাকায় প্রাণীগুলোকে দেখার জন্য। তাছাড়া এখানে দেখা মেলে জিরাফ, জেব্রা, ইম্পালা, এল্যান্ড, গ্রান্টস গাজেল, সিংহ, চিতাবাঘ, কারাকাল, আফ্রিকান বন্য কুকুর, জলপাই বেবুন, ভার্ভেট বানর, বানডেড, ডোয়ার্ফ মঙ্গুজ, ডিক, টপি, বেবুন, শকুন, উটপাখি ও ফিঞ্জ।

বন্য সৌন্দর্যে ভরা এক অনন্য ভ্রমণ

বন্য সৌন্দর্যে ভরা এক অনন্য ভ্রমণ

পার্কটি প্রায় ৫৫০টিরও বেশি পাখির প্রজাতির আবাসস্থল। তাই এটি পাখিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। ফ্ল্যামিঙ্গো থেকে শুরু করে রঙিন রোলার, হর্নবিল এবং হেরন পাখিরা প্রকৃতির ছন্দে নাচে। আরও একটি মজার তথ্য, ২০১৫ সালে এ পার্কে একটি সাদা জিরাফ দেখা গিয়েছিল। যার গায়ের রং ছিল সাদা। লিউসিজম নামক জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি হতে পারে।

যাতায়াত ও অবস্থান
তারাঙ্গিরে জাতীয় উদ্যানটি আরুশা শহর থেকে মাত্র ২ ঘণ্টার দূরত্বে। এখান থেকে মানিয়ারা হ্রদ জাতীয় উদ্যান মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে। তাই একাধিক উদ্যান ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে এটি হতে পারে আপনার আদর্শ যাত্রার সূচনা বিন্দু।

বন্য সৌন্দর্যে ভরা এক অনন্য ভ্রমণ

বন্য সৌন্দর্যে ভরা এক অনন্য ভ্রমণ

তারাঙ্গিরে জাতীয় উদ্যান আমার তানজানিয়া ভ্রমণের এক অনন্য অধ্যায়। প্রকৃতির বুকে প্রাণীদের এত কাছ থেকে দেখা, নিঃসন্দেহে এক আলাদা জীবনবোধ জাগিয়ে তোলে। সামনে আরও কিছু ন্যাশনাল পার্কে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে এ পার্কের অভিজ্ঞতা সারাজীবন মনে গেঁথে থাকবে।

আপনারা যদি প্রকৃতি ভালোবাসেন, বন্যপ্রাণী দেখতে চান কিংবা সত্যিকারের সাফারি অভিজ্ঞতা নিতে চান, তারাঙ্গিরে আপনার জন্যই অপেক্ষা করছে।

Lading . . .