৭০০ বছরের ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তির অনন্য নিদর্শন
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট, ২০২৫

গোড়ার মসজিদ। মাটির নিচে চাপা পড়া এক জীবন্ত ইতিহাসের সাক্ষী। কথিত আছে, সুলতানি আমলের হোসেন ও তাঁর ছেলে নুসরত শাহের আমলে গোড়ার মসজিদের গোড়াপত্তন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের বেলাট গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ জনপদ বারোবাজার। গোড়ার মসজিদ ছাড়াও বারোবাজারে আছে আরও বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ। জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদটি দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করেন দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থী।
মসজিদের গোড়ার কথা
ইতিহাসবিদ ও লোককথা অনুসারে, গোরাই শাহ নামক এক মুসলিম সুফি সাধক ঝিনাইদহের বারোবাজার এলাকায় আসেন। তখন সুলতানি আমল। সুলতান হোসেন শাহ বাংলার শাসক। তৎকালীন কোনো এক সময় সুফি গোরাই শাহ বারোবাজারের পাশের বেলাট দৌলতপুর গ্রামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেন। গোরাই সুফি ছিলেন হযরত খানজাহান আলীর (রহ.) শিষ্য। কথিত আছে, সুফি গোরাই শাহের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয় ‘গোরার মসজিদ’ বা ‘গোড়ার মসজিদ’। মসজিদের পাশেই কয়েকশ বছরের পুরোনো একটি কবর আছে। ধারণা করা হয়, কবরটি সুফি গোরাই শাহ দরবেশের।

কী আছে মসজিদে
প্রত্নতত্ত্ববিদ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্যমতে, মসজিদটি প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো। সুলতান হোসেন শাহ ও পরে তাঁর ছেলে নুসরত শাহের শাসনামলে ঝিনাইদহের বারোবাজার, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, খুলনাসহ এসব অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচারে আসেন সুফি-দরবেশরা। তাদের হাতেই পারস্যের স্থাপত্য ও ইসলামি স্থাপত্যশৈলীর আদলে গোড়ার মসজিদের নকশা তৈরি হয়। মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট। ছাদের কার্নিশে আছে দৃষ্টিনন্দন দুর্লভ পোড়ামাটির কারুকাজ।
স্থানীয় প্রবীণ মুসল্লিরা জানান, মসজিদটি মাটি চাপা অবস্থায় ছিল। উঁচু মাটির ঢিবি দেখে স্থানীয়রা একসময় মাটি কেটে মসজিদের স্থাপনার কিছু অংশ বের করেন। পরে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে বারোবাজারে খনন কাজ শুরু হয়। ওই সময় গোড়ার মসজিদসহ আশপাশের এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি মসজিদ আবিষ্কার হয়। মসজিদের পূর্বদিকে ছিল বড় শান বাঁধানো দিঘি। তবে বর্তমানে দিঘি থাকলেও শান বাঁধানো ঘাটের অস্তিত্ব নেই। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও নজরদারির অভাবে হারিয়ে গেছে ইতিহাসের সাক্ষী সেই শান বাধাঁনো ঘাট।
মসজিদের বৈশিষ্ট্য
মসজিদের দেওয়াল ৫ ফুট প্রস্থ বা চওড়া। তিন দরজা বিশিষ্ট মসজিদের মাঝখানে বড় দরজা। দুপাশে দুটো ছোট ছোট দরজা আছে। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণের দেওয়ালেও দুটি করে মোট চারটি প্রবেশপথ ছিল। বর্তমানে তা বন্ধ আছে। মসজিদের পূর্ব পাশের দেওয়াল ছাড়া বাকি তিন পাশের দেওয়ালে চারটি কালো পাথরের স্তম্ভ বা পিলার। পোড়ামাটির কারুকার্য খচিত মসজিদটির দেওয়ালে আছে ইসলামি স্থাপত্যশৈলী, পারস্য ও সুলতানি আমলের নকশা।

মসজিদের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে মসজিদে স্থানীয় মুসল্লিরা নিয়মিত ইবাদত-বন্দেগী করেন। মসজিদটি একনজর দেখতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। স্থানীয় মুসল্লিদের উদ্যোগে মসজিদটি পরিচালিত হয়।
দেখতে যাবেন যেভাবে
গোড়ার মসজিদ দেখতে আপনাকে ঝিনাইদহ অথবা যশোর শহরে আসতে হবে। ঝিনাইদহ শহর থেকে যশোরগামী যে কোনো যাত্রীবাহী বাসে বারোবাজার পৌঁছতে হবে। এরপর অটোভ্যান, ইজিবাইক বা ছোট ছোট যানবাহনে সহজেই গোড়ার মসজিদে পৌঁছে যাবেন। যশোর থেকেও গোড়ার মসজিদে যাওয়ার একই উপায়। তবে যারা যশোর ও ঝিনাইদহের বাসিন্দা, নিজেদের সুবিধামতো গোড়ার মসজিদ ঘুরে আসতে পারেন।