মসুর, মুগ নাকি মাষকলাই—কোন ডাল আপনার জন্য উপযোগী
প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

ডালকে বলা হয় ‘গরিবের প্রোটিন’। এ দেশের মানুষের পাতে প্রতিদিনের জন্য ডাল জায়গা করে নিয়েছে। তবে ডালের প্রোটিন ‘সেকেন্ড ক্লাস’ প্রোটিন। ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেটসহ গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আছে।
ডাল খেলে রক্তের শর্করা দ্রুত বাড়ে না। ডালে কিছু গুড ফ্যাট থাকে, যা খুবই উপকারী। ফাইবার–সমৃদ্ধ হওয়ায় পেটের পীড়া নিরাময় করে। ডাল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
নানা প্রকারের ডাল পাওয়া যায়। সব ডালে পুষ্টিমান এক নয়। প্রোটিনের পরিমাণও ভিন্ন। আবার সব ডাল সবার জন্য উপযোগী না–ও হতে পারে।
প্রোটিন ও ভিটামিন বির সমৃদ্ধ উৎস মাষকলাইয়ের ডাল। এই ডাল হজমশক্তি বাড়ায়, দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। শরীরে শক্তি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দারুণ কার্যকর।
মসুর ডাল আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি১, বি২ ও বি৩-এর মতো প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মসুর ডালে ২৩ শতাংশ প্রোটিনের পাশাপাশি থাকে প্রায় ৫৯ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট।
মুগ ডালে ২৪ শতাংশ প্রোটিনের পাশাপাশি প্রায় ৬২ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকে। অন্যান্য ডালের চেয়ে ফ্যাটের পরিমাণও কিছুটা বেশি। উচ্চ ক্যালরির পাশাপাশি ফাইবারও কিছুটা বেশি থাকে, যা হৃদ্রোগীদের জন্য উপকারী।
ছোলায় প্রায় ১৮ শতাংশ প্রোটিন, ৬৪ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট ও গুড ফ্যাট থাকে। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস।
খেসারির ডালে প্রায় ২৩ শতাংশ প্রোটিন থাকে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। ব্যথা ও অরুচিতে এই ডাল বেশ কার্যকরী।
আগে অড়হর ডালের বেশ প্রচলন থাকলেও এখন এটি বেশ কম পাওয়া যায়। প্রোটিন ও ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই ডাল কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে খুবই কার্যকর।
কিডনির রোগীদের পরিমিত পরিমাণে ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর প্রোটিন সীমিত করতে ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে ছোলার ডাল, মটরের ডাল, মাষকলাইয়ের ডাল ও অড়হর ডাল খাবেন না। এগুলো উচ্চ পিউরিন–সমৃদ্ধ। মসুর ডাল ও মুগ ডাল পাতলা করে রান্না করে খাওয়া যাবে।
যেকোনো ধরনের বাতের ব্যথায় ডাল খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। হজমে সমস্যা থাকলে মসুর ডাল খাবেন না। আইবিএসের রোগীরা অনেক সময় ডাল সহ্য করতে পারেন না। রাতের খাবারে ডাল খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। খেসারির ডাল বেশি খেলে ল্যাথারিজম নামক একধরনের রোগ হতে পারে।
মো. ইকবাল হোসেন , জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল