কটন বাড ব্যবহার করে বিপদ ডেকে আনছেন না তো
প্রকাশ: ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

কটন বাড ব্যবহার করে মৃত্যু বিরল ঘটনা হলেও ২০০৮ সালে কানাডায় এমন এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল। প্রতিনিয়ত কটন বাড ব্যবহার করতেন মন্ট্রিয়ল নিবাসী ডেনিয়েল সেন্ট পিঁয়ে। প্রতিদিন বারবার কটন বাড ব্যবহারের ফলে তাঁর বহিঃকর্ণে সংক্রমণ হয়। পরে আরও বেশি কটন বাড ব্যবহার করায় তাঁর বহিঃকর্ণের সংক্রমণ মধ্যকর্ণ থেকে অন্তঃকর্ণেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের পর্দা ছিদ্র করে যা মেনিনজাইটিসের মতো জটিলতা সৃষ্টি করে। পরিণতিতে ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মারা যান। ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। তারা কটন বাডের প্যাকেটের ওপর সতর্কবাণী লিখতে পরামর্শ দেয়।
অন্তঃকর্ণ থেকে মস্তিষ্ক এবং মস্তিষ্কের আবরণ মাত্র কয়েক মিলিমিটার। ফলে সংক্রমণ অতি সহজে মস্তিষ্ক ও তার আবরণ সংক্রমিত করতে পারে। মেনিনজাইটিস বা স্পাইনাল কর্ডের চারপাশের প্রদাহ জটিলতা হিসেবে দেখা দেয়।
অনেকেই কান পরিষ্কার করতে কটন বাড ব্যবহার করেন। আমাদের ধারণা, কটন বাড কানের ময়লা দূর করে। এই ধারণা ভুল। আসলে এটি ব্যবহারে বাইরের দিকের কিছু ময়লা বেরিয়ে এলেও বাকি ময়লাকে আরও ঠেলে ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দেয়। ফলে ওয়াক্স ইমপ্যাকশন বা আটকে গিয়ে কানে ব্লক, ব্যথা হতে পারে, কানে কম শুনতে পারেন। এ ছাড়া কটন বাড দিয়ে খোঁচাখুঁচি করলে কানের ভেতর রক্তপাত হতে পারে, কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এ থেকে শ্রবণশক্তি হারানোর ঘটনাও ঘটতে পারে।
কটন বাড ব্যবহার করার পর অনেকেরই বমি বমি ভাব, মাথাঘোরা হতে পারে। আঘাত থেকে নার্ভের ক্ষতি হলে স্বাদগ্রন্থি বিকল হতে পারে, এমনকি মুখের পেশি প্যারালাইসিস হতে পারে। আর অপরিচ্ছন্ন হলে কটন বাডের মাধ্যমে কানের ভেতর সংক্রমণ হতে পারে, যা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
কানের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য আমাদের কানে প্রাকৃতিক পদ্ধতি বিদ্যমান। কানের ময়লা বা ওয়াক্স বা সেরুমেন হলো একটি তৈলাক্ত জিনিস, যা কানকে রক্ষা করে। এটি নিজে নিজেই পরিষ্কার হয়ে যায়। তাই কটন বাড ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারও যদি ময়লা বা ওয়াক্স আটকে গেছে বলে মনে হয়, তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ভালো।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী , নাক-কান-গলা বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা