Advertisement

হট ফ্লাশ নিয়ে ৫টি ভুল ধারণা

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নারীদের মধ্যবয়সে এক বিব্রতকর যন্ত্রণার নাম ‘হট ফ্লাশ’। রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজের সময় বা পরে নারী হরমোন ইস্ট্রোজেনের পড়তির কারণে দেখা দেয় এই হট ফ্লাশ। হঠাৎ গরম লাগা এবং কান, মুখ ও মাথা গরম হয়ে আসা, প্রচুর ঘাম, মুখ ও কান লাল হয়ে আসা হট ফ্লাশের লক্ষণ। এর সঙ্গে দেখা দিতে পারে মেনোপজের অন্যান্য লক্ষণ, যেমন ঘুমের সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়া, ক্লান্তি, ব্রেন ফগ ইত্যাদি।

এসব সমস্যা আগেকার নারীদের হতো না, এটা ভুল ধারণা। মেনোপজ নারীর জীবনের এক স্বাভাবিক পরিবর্তন, আর এই সময় হরমোনের নিম্নমুখী মাত্রা হট ফ্লাশের জন্য দায়ী। এটা আগেও যেমন হতো, এখনো হয়। যদিও উপসর্গগুলো কারও বেলায় তীব্র, কারও বেলায় মৃদু হতে পারে, কিন্তু এই সমস্যা আগেকার দিনে ছিল না, এই ধারণা ভুল। আগে নারীরা মাসিক এবং এ–সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে জড়তা বোধ করতেন বলে তাঁদের সমস্যাগুলো জানা হতো না। বর্তমানে নারীরা নিজেদের শরীর নিয়ে সচেতন, বিভিন্ন উপসর্গে চিকিৎসকের শরণাপন্নও হন এবং মেনোপজাল সিনড্রোম ও হট ফ্লাশের আধুনিক চিকিৎসাও বিদ্যমান। তাই ধারণা করা হয়, এখন এগুলো বেশি হচ্ছে।

হঠাৎ গরম লাগা এবং কান, মুখ ও মাথা গরম হয়ে আসা, প্রচুর ঘাম, মুখ ও কান লাল হয়ে আসা হট ফ্লাশের লক্ষণ।

হট ফ্লাশ কেবল মেনোপজের পরপর হয়, এ ধারণাও ভুল। কারণ, মেনোপজের কয়েক বছর আগে থেকেই ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। তাই একটা বয়সের পর মাসিক চলাকালেও হট ফ্লাশ হতে পারে। একে বলে পেরিমেনোপজাল সিম্পটম।

মেনোপজের পর প্রথম প্রথম হট ফ্লাশ হয়, পরে এমনিতেই সেরে যায়, এ ধারণাও ঠিক নয়। মেনোপজের ঠিক পরপর না হয়ে বেশ কয়েক বছর পরও শুরু হতে পারে উপসর্গ। আবার মেনোপজের আগে শুরু হয়ে ৫ থেকে ৭ বা ৮ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে উপসর্গগুলো। গবেষণা বলছে, মেনোপজের পর, এমনকি ১৫ বছর পর্যন্ত হট ফ্লাশের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

কিছু প্রাকৃতিক দাওয়াই দিয়ে হট ফ্লাশ কমানো সম্ভব—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম প্রাকৃতিক ও হারবাল দাওয়াইয়ের প্রচারণা চলে হট ফ্লাশ কমানোর দাওয়াই হিসেবে। কালিজিরা, ফ্ল্যাক্সসিড, সয়া, ইভনিং প্রিমরোজ ওয়েল, জিনসেং, এলাচি, অশ্বগন্ধাসহ আরও নানা কিছু বিক্রি হয় হট ফ্লাশের চিকিৎসা হিসেবে। এসব প্রাকৃতিক চিকিৎসায় হট ফ্লাশ কমে, এমন কোনো প্রমাণ গবেষণায় পাওয়া যায়নি। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, নিয়মিত শরীরচর্চা বা যোগব্যায়াম, ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ, চা–কফি এড়িয়ে চলার মতো দৈনন্দিন চর্চায় উপকার মেলে।

হট ফ্লাশের চিকিৎসার দরকার নেই, এমনিতেই সেরে যাবে—এটিও ভুল ধারণা। কারণ, হট ফ্লাশের যথাযথ বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে। হট ফ্লাশের উপসর্গ একজন নারীর ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনকে দুঃসহ করে তোলে। এ ছাড়া হট ফ্লাশের উপসর্গের সঙ্গে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি, হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি বা কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্টের সম্পর্ক রয়েছে। হট ফ্লাশ হলে সঠিক চিকিৎসার জন্য একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডা. তানজিনা হোসেন, অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ

আগামীকাল পড়ুন : সাইনাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ

Lading . . .