কঠোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিসিসিআই, চাপ বাড়বে নাকি অবসরে বুমরাহ?
প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

নিঃসন্দেহে বর্তমানে ভারতের সেরা পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ। এমনকি তাকে দেশটির সর্বকালের সেরাদের একজন বলেও গণ্য করা হচ্ছে। বাকি বোলারদের ভীড়ে ইকোনমি ধরে রেখে ব্রেকথ্রু আনার ক্ষেত্রে ৩১ বছর বয়সী এই পেসারের জুড়ি নেই। যদিও ওয়ার্কলোড ও চোটের বিষয় বিবেচনায় বুমরাহ এখন বেছে বেছে ম্যাচ খেলছেন। যা নিয়ে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের মাটিতে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-২ সমতা নিয়েছে শেষ করেছে ভারত। যদিও স্বাগতিক ইংলিশরা তিন ম্যাচ শেষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। এরপর ম্যানচেস্টারে ড্র এবং ওভালে পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে নাটকীয় জয়ের পর ড্র দিয়ে সফর শেষ করল ভারত। সিরিজের সর্বোচ্চ ২৩ উইকেট শিকার করে নায়ক বনে গেছেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। এ ছাড়া বুমরাহ’র অনুপস্থিতিতে অন্য পেসাররাও ছিলেন বেশ উজ্জ্বল।
ওয়ার্কলোড ও চোটের ঝুঁকি বিবেচনায় ইংল্যান্ড সফরে কেবল ৩ ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বুমরাহ। তাতে সম্মতি ছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টেরও। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। ইংল্যান্ডে এবার ৩ টেস্ট খেললেও ১৪ উইকেট শিকার করেন বুমরাহ। কিন্তু তার বেছে বেছে ম্যাচ খেলার বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ওভাল টেস্টে সিরাজ-প্রসিধ কৃষ্ণাদের দারুণ ফর্ম নতুন করে আলোচনার জোগান দিয়েছে ক্রীড়া বিশ্লেষকদের। ৩ ম্যাচে বুমরাহ’র সমান ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন কৃষ্ণাও।
ভারতীয় সংবাদসংস্থা পিটিআই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিসিসিআই নতুন একটা নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে। যেখানে ক্রিকেটাররা তাদের ইচ্ছামাফিক আর ম্যাচ বেছে নিতে পারবেন না। ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর এবং মুখ্য নির্বাচক অজিত আগারকারের নেতৃত্বে নির্বাচকমণ্ডলীসহ ম্যানেজমেন্টের বাকি সদস্যরাও এই ব্যাপারে সহমত জানিয়েছেন। সূত্রমতে, ক্রিকেটারদের বারবার সতর্ক করা হলেও তারা ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের অজুহাত দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলছেন না। যা আর বরদাশত করবে না বিসিসিআই।
শেষ পর্যন্ত নিয়মটি চালু করা হলে তাতে বড় শিকার হতে পারেন বুমরাহ। এর আগে টেস্টে বড় ম্যাচ বিবেচনায় অন্য ফরম্যাটে তাকে কম পেয়েছে ভারত। এর বাইরে অবশ্য তার চোটপ্রবণতার বিষয়ও বিবেচ্য। তার মতো বড় তারকাকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিশ্চিতভাবেই পেতে চাইবে তার দল। লর্ডসের পর যখন ম্যানচেস্টারে বুমরাহ লাগাতার ২ টেস্ট খেলতে নামার পর তার বলের গতি অনেকটাই কমে গিয়েছিল। সাধারণত বুমরাহ ঘণ্টায় ১৪০-১৪৫ কিলোমিটার গতিবেগে বল করে থাকেন। কিন্তু ম্যানচেস্টার টেস্টে তার ফিটনেসের কিছু দুর্বলতা ফুটে ওঠে। সেকারণে তার বোলিংয়ের গতি গড়ে ঘণ্টাপ্রতি ১৩০-১৩৫ কিলোমিটার হয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন
বিসিসিআইয়ের এক সূত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানায়, ‘বুমরাহ’র বিষয়টি ব্যতিক্রম। এটি শুধুমাত্র বোলিং কোচ কিংবা সাপোর্ট স্টাফের নির্দেশনা পেয়ে তাকে বিশ্রাম দেওয়ার বিষয় নয়। এর সঙ্গে দলের মেডিক্যাল স্টাফরাও জড়িত এবং বুমরাহ’র মতো ক্রিকেটারও নিজ থেকে জয়ের তাড়না দেখান। এর বাইরে যে সিদ্ধান্তই আসুক সেটি তাকে রক্ষা এবং আরও বেশি সময় মাঠে রাখার লক্ষ্যই নেওয়া হয়।’ বুমরাহ–ও নাকি টিম ম্যানেজমেন্ট এবং বিসিসিআইকে তিন ফরম্যাটেই খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। সেক্ষেত্রে তার বেছে বেছে ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত সামনে কতটুকু প্রভাব ফেলে সেটাই দেখার বিষয়।
আবার বিসিসিআই যদি খেলোয়াড়দের নিজ থেকে ম্যাচ বেছে খেলার সিদ্ধান্তে লাগাম টানে, সেক্ষেত্রে বুমরাহকে টেস্ট ক্যারিয়ার নিয়ে অবশ্যই ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। এখন পর্যন্ত তিনি ৪৮ টেস্ট টেস্টে ২১৯টি উইকেট শিকার করেছেন। ভারতের হয়ে টেস্টে তিনি সবচেয়ে দ্রুততম দুইশ উইকেটশিকারি এবং বিশ্ব ক্রিকেটে সর্বনিম্ন ইকোনমিতে ২০০ উইকেট তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে বুমরাহ রীতিমতো ইতিহাস গড়েছেন। তিনি বিশ্বে একমাত্র যে, ২০ রানের কম (১৯.৫৬) গড় নিয়ে ২০০ উইকেট শিকার করেছেন টেস্টে।
এএইচএস