৬ প্লেয়ারের গোল, এয়ারফোর্সকে উড়িয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক ইস্টবেঙ্গলের
প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫

নিয়ম রক্ষার ম্যাচে কত গোলে ইস্টবেঙ্গল জিততে পারে সেটা ছিল এই ম্যাচে প্রধান আলোচ্য বিষয়। ডুরান্ড কাপের প্রথম ম্যাচে সাউথ ইউনাইটেড এফসির বিরুদ্ধে যেই খেলাটা খেলেছিল লাল হলুদ, এ দিনও সেটাই দেখা গেল। টিম গেম বলতে যেটা বোঝায় সেটা দেখা গেল। নামধারীর বিরুদ্ধে দল পুরো ফিট ছিল না। এ দিন যে দলটা খেলতে নামল তাদের খেলা দেখে মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা বেশ চিন্তায় থাকবে। মিডফিল্ড থেকে আক্রমণ সব বিভাগেই বাজিমাত করল লাল হলুদ। যার ফল, ইন্ডিয়ার এয়ারফোর্সকে ৬-১ গোলে হারাল তারা। গোলগুলি করেন আনোয়ার, বিপিন, হামিদ, রশিদ, সল ক্রেস্পো, ডেভিড।
শুরু থেকেই ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে রেখেছিল ইস্টবেঙ্গল। খাতায় কলমে দুর্বল এয়ারফোর্সের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল কত গোলে জিততে পারে সেই দিকে ছিল সকলের নজর। কিন্তু শুরু থেকে নজর কাড়েন, দলের গোলকিপার শুভজিৎ বসু। শুরুতে নিশ্চিত দুটো গোলে সেভ করেন তিনি। তবে ইস্টবেঙ্গল যেই গতিতে আক্রমণ করছিল তাতে শুভজিতের পক্ষে বেশিক্ষণ দলের রক্ষণ সামলানো সম্ভব হয়নি। ম্যাচ শুরু হওয়ার মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যেই গোল করেন হামিদ আহদাদ। মাঠের ডান প্রান্ত থেকে একটা ক্রস রিসিভ করেছিলেন এডমুন্ড। বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢোকেন তিনি ও ক্রস বাড়ান আহদাদকে। তিনি কোনও ভুল না করে নিখুঁত হেডে জালে জড়ান।
প্রথম গোলের পর ইস্টবেঙ্গল যেন থামার নাম নিচ্ছিল না। একের পর এক আক্রমণ শানাচ্ছিল। যার ফল, ফের গোল। ২৬ মিনিটে এয়ারফোর্সকে দ্বিতীয় গোল। এ বার বিপিন সিং, একটা থ্রু পাস থেকে বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢোকেন। সামনে গোলকিপার ও বিপক্ষের ডিফেন্ডার ছিল। মাথাটা ঠাণ্ডা রেখে তিনি গোলকিপার শুভজিৎকে কাটান। এর পর ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোল করেন। গত কয়েকটা ম্যাচে বিপিন ফিনিশ করতে পারছিলেন না, এই ম্যাচে সেটাই করে দেখালেন। তবে একটা সময়ে যখন প্রভসুখন সিংয়ের কাছে বল যাচ্ছিল না সেই সময় অতর্কিতে হামলা এয়ারফোর্সের।
৩৭ মিনিটে ডান দিক থেকে একটি বল পান আমন খান। লাল হলুদ ডিফেন্ডাররা তখনও সকলে জায়গায় আসতে পারেননি। আমন বলটা ধরে সরাসরি হেড করেন। লাল হলুদ রক্ষণ কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল শোধ করেন আমন। প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে ১৩টা শট নেয়। গোলে বল ছিল ৭টা। বলের দখল ছিল ৬১ শতাংশ। এই ৭টা শটের মধ্যে মাত্র দুটো গোলে ঢুকেছে। এডমুন্ড, বিপিন, মিগুয়েল বাইরে মারেন একাধিক শট।
প্রথমার্ধে এয়ারফোর্স যেটুকু লড়ার চেষ্টা করেছিল দ্বিতীয়ার্ধে সেটাও দেখা গেল না। কার্যত ফাঁকা মাঠে খেলে গেল লাল হলুদ। কোচ অস্কার ব্রুজ়ো জানিয়েছিলেন তিনি প্লেয়ার বদল করে খেলাবেন। আর করলেনও সেটা। যার ফলে ইস্টবেঙ্গল আরও বিপজ্জনক। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল লাল হলুদ। কিন্তু মিস করেন হামিদ।
৬৪ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল তৃতীয় গোল পায়। মিগুয়েলের কর্নার থেকে দুর্দান্ত হেডে গোল করেন আনোয়ার আলি। তাঁর এই হেডটা বিশ্বের যেকোনও গোলকিপারকে টলিয়ে দিতে পারে। এর পর যেই গোলটা হলো সেটা অনেকদিন ডুরান্ডের ইতিহাসে লেখা থাকবে। ৬৮ মিনিটে এয়ারফোর্সের গোলের সামনে পায়ের জটলা ছিল সেখান থেকে বলটা ক্লিয়ার করেন এয়ারফোর্সের প্লেয়াররা। বলটা যায় ডি বক্সের বাইরে থাকা রশিদের কাছে। তিনি দূরপাল্লার শট নেন। বিপক্ষের গোলকিপার সহ পাঁচজনকে টপকে চলে যায় তাঁর শট আর গিয়ে পড়ে বিপক্ষের জালে। তাঁর গোলার মতো শট আটকানোর মতো দক্ষতা ছিল না বিপক্ষের।
৮৭ মিনিটে বিপক্ষের গোলকিপারের হাতে বল লেগে তা বেরিয়ে যায়। সল ক্রেস্পো বলটা পেয়ে জালে জড়িয়ে দেন। ৯১ মিনিটে শেষ গোল ইস্টবেঙ্গলের। বিপক্ষের গোলকিপার ও ডিফেন্ডারদের ভুলে হেডে গোল করেন ডেভিড।
এই ম্যাচের পর ইস্টবেঙ্গল খেলবে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ। কোন দল পড়বে সেটা সময় বলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিপক্ষ হতে পারে মোহনবাগান। সেটা ধরে নিয়ে এ দিন প্রস্তুতি সারল লাল হলুদ। ৬টা গোল আর প্রতিটাই করলেন আলাদা আলাদা প্লেয়ার। পুরো ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল গোলে শট নিল ২৫টা। বলের দখল ৬৫%। নিঃসন্দেহে এটা স্বস্তিতে রাখবে লাল হলুদকে।