কোরিয়ার বিপক্ষে লিড নিয়েও বড় ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ
প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়া তো বটেই বিশ্ব ফুটবলেরই পরাশক্তি। সেই কোরিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল দল প্রথমে গোল করে লিড নিয়েছিল। প্রথমার্ধে খেলা ১-১ গোলে সমতা ছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে খেই হারায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১-৬ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে আফিদাদের।
এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী টুর্নামেন্টের বাছাইয়ে ৩২ দল আট গ্রুপে খেলছে। আট গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও সেরা তিন রানার্স আপ আগামী বছর থাইল্যান্ডে মূল পর্বে খেলবে। বাংলাদেশ আজ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র করলে এইচ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে খেলতে পারত। কোরিয়ার বিপক্ষে ৫ গোলের ব্যবধানে হারায় এখন বাংলাদেশের তিন ম্যাচ শেষে ৬ পয়েন্ট ও গোল ব্যবধান ৫। ফলে সেরা তিন রানার্স আপের মধ্যে থাকা খানিকটা শঙ্কার মধ্যেই পড়েছে। আজ গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোর ফলাফলের উপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়া কাপ খেলা।
আরও পড়ুন
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছিল শক্তিশালী কোরিয়ার বিপক্ষে। দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটেই গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এরপরই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় তারা। ফুটবলাররা যেন অপেক্ষা করছিলেন কখন শেষ বাঁশি বাজবে।
দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় পুরো সময় বাংলাদেশ অর্ধেই খেলা হয়েছে। কোরিয়া ক্রমেই ব্যবধান বড় করেছে। ৬১ মিনিটে আরেকটি সংঘবদ্ধ আক্রমণে অধিনায়ক চো হেং আগুয়ান গোলরক্ষক স্বর্ণাকে পরাস্ত করে গোল করেন। দ্বিতীয় গোলটিও বাংলাদেশ এভাবে হজম করেছিল। বৃটিশ কোচ পিটার বাটলারের হাই লাইন ডিফেন্স থিউরি আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এই তত্ত্ব কার্যকর নয়। সেটা কোরিয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে এক সঙ্গে দুই খেলোয়াড় বদলেও খেলার পরিস্থিতি আর বদল করতে পারেনিন বাটলার
৮৪ মিনিটের দিকে বাংলাদেশের ডিফেন্ডার কোরিয়ান ফরোয়ার্ডকে ফাউল করেন। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কোরিয়ান অধিনায়ক পেনাল্টি থেকে স্কোরলাইন ৪-০ করেন। শেষ দশ মিনিটে আরো দুই গোল হজম করে বাংলাদেশ। লাওসে ভিয়েনতিয়েনে বাংলাদেশের শেষটা হলো দুঃস্বপ্নের মতোই।
আজ দিনের শুরুটা দারুণ করেছিল বাংলাদেশ। খেলা শুরুর প্রথম আক্রমণই করেছে বাংলাদেশ। ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সাগরিকা প্রথম মুভেই গোলের উৎস রচনা করেছিলেন। কোরিয়ান গোলরক্ষক এগিয়ে আসায় অবশ্য সেটা আর হয়নি। বাংলাদেশের গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি।
১৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে সাগরিকা ও শান্তি মারডি নিজেদের মধ্যে বল দেয়া-নেয়া করে বক্সে প্রবেশ করেন। বক্সের বা দিক থেকে শান্তি বল বাড়ান। কোরিয়ান গোলরক্ষকের হাতের নিচ দিয়ে বল সামনে আগায়। ফাকায় দাড়িয়ে থাকা শ্রমতী তৃষ্ণা রাণী টোকা দিয়ে বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি। লাওসের স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা আনন্দে মেতে উঠেন। বয়স ভিত্তিক হলেও কোরিয়ার জালে বাংলাদেশের গোল এটা ফুটবলে বড় আনন্দের উপলক্ষ্যই।
বাংলাদেশ অবশ্য লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। তিন মিনিট পরই কোরিয়া খেলায় সমতা আনে। পিটার বাটলারের অধীনে বাংলাদেশ নারী দল হাই লাইন ডিফেন্স করে। সেন্টার লাইনের একটু নিচে থাকা বাংলাদেশের ডিফেন্স কোরিয়ার এক লং বল পরাস্ত হয়। দ্রুতগতির কোরিযান ফরোয়ার্ডরা বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে বক্সে বাংলাদেশের গোলরক্ষককে একা পেয়ে গোল করেন।
ম্যাচে সমতা আসার পর কোরিয়া বাংলাদেশকে চেপে ধরে। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকারের উপর কিছু সময়ের জন্য ঝড় বয়ে যায়। তিনি অনেকটা ঠান্ডা মাথায় সামাল দিয়েছেন। আবার কিছু আক্রমণ দারুণ দক্ষতায় প্রতিহত করেছেন গোলরক্ষক স্বর্ণা রাণী। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ের শেষ মিনিটে পোস্ট থেকে অনেক সামনে বেরিয়ে এসেছিলেন স্বর্ণা। কোরিয়ান ফরোয়ার্ডের পায়ে বল থাকলেও তিনি প্রতিহত করতে সক্ষম হন। কোরিয়ার ফরোয়ার্ডরা গোল মিসও করেছে একাধিক।
কোচ পিটার বাটলার প্রথমার্ধেই দুই জন খেলোয়াড় বদল করেছেন। গত ম্যাচে অলিম্পিক গোল করা শান্তি মারডিকে আজ ২৫ মিনিটের মধ্যে উঠিয়ে নিয়েছেন। কোরিয়াও একটি পরিবর্তন করেছে। বাংলাদেশ কোরিয়ার বিপক্ষে রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলেনি। সব দিক থেকে কোরিয়া এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ জয়ের জন্যই খেলেছিল শুরু থেকে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে এলেমেলো ফুটবলে সব ভেস্তে গেছে।
এজেড/এইচজেএস