‘প্রতিটি দেশকে দেখাচ্ছি, বাংলাদেশ এখন আর আন্ডারডগ নয়’
প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২৫

আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখন ভরা মৌসুম বাংলাদেশের। আগামী ও তার পরের বছর এএফসি এশিয়ান কাপের ৭টি আসর আছে। সবগুলোর বাছাই হচ্ছে এ বছর। সবগুলো বাছাইয়েই অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সাফল্যের সাথে নারী এশিয়ান কাপ বাছাই শেষ করেছে বাংলাদেশ। চলমান আছে পুরুষ জাতীয় দল এবং নারী অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ বাছাই।
এশিয়ান কাপের পাশাপাশি সাফেরও কয়েকটি আয়োজন আছে এ বছর। সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ এরই মধ্যে শিরোপা ধরে রেখেছে। তারও আগে হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়েছে। সাফের আরও আয়োজন আছে অনূর্ধ্ব-১৭ ছেলে ও মেয়েদের। হয়ে যাওয়া এবং সামনে থাকা টুর্নামেন্টগুলোয় বাংলাদেশের ম্যাচ পঞ্চাশের কাছাকাছি। এশিয়ান কাপ ও সাফ মিলিয়ে ১১টা টুর্নামেন্টে ৫০টির মতো ম্যাচ। যার মধ্যে মাত্র ৯টি দেশের মাটিতে। বাকি সব বিদেশে।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সাফল্য অনেক বেশি। মেয়েদের শেষ হওয়া দুটি আসরে যেমন মিয়ানমারে এশিয়ান কাপ বাছাই ও ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ শতভাগ সফল। লাওসে চলমান অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ বাছাইয়েও ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে।
এর মধ্যে বড় খবর দিয়েছে নারী ফুটবলে র্যাংকিংয়ে ২৪ ধাপ এগিয়ে। বাংলাদেশের মেয়েদের এ সাফল্য ফিফাও ফলাও করে প্রশংসা করেছে। সবকিছুর পর বিশাল এ যজ্ঞ পরিচালনা করতে বাফুফে কর্মকর্তাদের ঘাম ঝরাতে হচ্ছে।
মেয়েদের এ সাফল্য ও বছরজুড়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যস্ততা নিয়ে জাগো নিউজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। যার সময়কালে মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশ পেয়েছে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সফলতা।
জাগো নিউজ: এ বছরটা আন্তর্জাতিক ফুটবল সূচিতে ঠাসা। বলতে গেলে দম ফেলানোর সময় নেই। কোনো চাপ অনুভব করছেন?
তাবিথ আউয়াল: হ্যাঁ। এ বছর অনেক জাতীয় ও বয়সভিত্তিক মিলিয়ে অনেক আন্তর্জাতিক সূচি। তবে চাপের কিছু নেই। কারণ, সূচি হঠাৎ করে হয়নি। আমরা জানতাম। তাই পরিকল্পনা সেভাবেই করেছি।
জাগো নিউজ: এবার তো শুধু এশিয়ান কাপেই ৭টি বাছাই ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। ম্যাচ তো অনেক। দেশের বাইরে গিয়েই প্রায় সব ম্যাচ খেলতে হচ্ছে।
তাবিথ আউয়াল: এবার আমাদের সাতটি এশিয়ান কাপের বাছাই খেলতে হচ্ছে এটা ঠিক। একটি শেষ হয়েছে। নারী জাতীয় দল চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। আরো ছয়টি বাকি।
জাগো নিউজ: বাকিগুলো কী কী?
তাবিথ আউয়াল: লাওসে আমাদের নারী অনূর্ধ্ব-২০ দল এশিয়ান কাপের বাছাই খেলছে। এরই মধ্যে দুটি ম্যাচ জিতে কোয়ালিফাইয়ের সম্ভাবনা জোরালো করেছে। পুরুষ জাতীয় দলের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের দুটি ম্যাচ শেষ হয়েছে। আরো চারটি ম্যাচ বাকি। এ ছাড়া এ বছর আছে অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপের বাছাই, অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপের বাছাই, নারী অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপের বাছাই এবং ফুটসাল এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই।
জাগো নিউজ: এশিয়ান কাপ বাছাই ছাড়া তো চলতি বছরে তো সাফেরও কয়েকটি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে হচ্ছে তাই না?
তাবিথ আউয়াল: হ্যাঁ। কয়েকদিন আগে নারী সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ হয়েছে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সামনে ছেলেদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ এবং ছেলে ও মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপও আছে।

জাগো নিউজ: তার মানে এশিয়ান ও সাফ মিলিয়ে ১১ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। অনেক ম্যাচ। সিংহভাগই দেশের বাইরে। বিশাল কর্মযজ্ঞ। টাকা-পয়সা তো যাচ্ছে অনেক তাই না? কিভাবে অর্থের সংকুলান করছেন?
তাবিথ আউয়াল: তাতো যাচ্ছেই। আর্থিক বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা লাগবে। যদিও আমরা কোনো সংকটে নেই। আমরা পরিকল্পনামতোই সব করছি।
জাগো নিউজ: তাহলে যে বললেন সহযোগিতা লাগবে সরকারের?
তাবিথ আউয়াল: সব কিচুতেই সরকারের সহযোগিতা দরকার আছে। আমাদের আর্থিকের চেয়ে বেশি দরকার টেকনিক্যাল সাপোর্ট। এখানে একটু সংকটে আছি। এত টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য যে পরিমাণ টেকনিক্যাল সাপোর্ট দরকার, সেখানে ঘাটতি আছে।
জাগো নিউজ: ১০ আগস্ট যদি নারী অনূর্ধ্ব-২০ দল দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র করতে পারে তাহলে তো আরেকটি এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে যাবে বাংলাদেশ। কতটা আশাবাদী?
তাবিথ আউয়াল: আমাদের মেয়েরা ভালো খেলছে। আমরা শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
জাগো নিউজ: যদি অনূর্ধ্ব-২০ মেয়েরাও এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে তাহলে তো আপনাকে দুটি দলের প্রস্তুতির ব্যবস্থা করতে হবে।
তাবিথ আউয়াল: প্রথমে বলি আমাকে না, আমাদের। ফুটবলের সাথে আপনিও আছেন। তাই আমরা সবাই এক সাথেই কাজ করবো।
জাগো নিউজ: দুটি দল এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে গেলে প্রস্তুতি কিভাবে নিতে চান? তখন তো এক কোচের জন্য দুটি দল প্রস্তুত করানো কঠিন হয়ে যাবে তাই না?
তাবিথ আউয়াল: দুটি কোচিং স্টাফ করে দেওয়া হবে পিটার বাটলারের নেতৃত্বেই। এখন তো অনেক আন্তর্জাতিক খেলা। আমরা ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে দুটি করে ভাগ করে দেবো। জাতীয় দল এবং তারপর বয়সভিত্তিক দলগুলোর জন্য আলাদা আলাদা কোচিং স্টাফ থাকবে।
জাগো নিউজ: সিনিয়র নারী ফুটবল দলের প্রীতি ম্যাচের জন্য প্রতিপক্ষ খুঁজছেন। অনূর্ধ্ব-২০ মেয়েরা এশিয়ান কাপে উঠলে তাদের জন্যও তো প্রীতি ম্যাচের ব্যবস্থা করতে হবে।
তাবিথ আউয়াল: তাতো করবোই। তবে যেহেতু মেয়েরা র্যাংকিংয়ে বড় ধরনের উন্নতি করেছে তাই এখন তাদের খেলার সুযোগ বেড়ে যাবে।
জাগো নিউজ: কিভাবে?
তাবিথ আউয়াল: র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে ছিলাম বলে অনেক দেশই খেলতে চাই না তো আমাদের সাথে। তাই দল পেতে অনেক ঘাম ঝরাতে হতো। এখন র্যাংকিং বাড়ায় উল্টো অনেক দেশই আমাদেরকে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে।
জাগো নিউজ: বাংলাদেশ ফুটবলের দায়িত্ব নিয়ে এখন নিশ্চয়ই আপনি খুশি? অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সাফল্য আসছে। আপনি কি ভাগ্যবান নাকি জাদুকর?
তাবিথ আউয়াল: আমি কিছুই না। একটু সুযোগ দিলেই ওরা পারবে। হয়তো মনে আছে, মিয়ানমার থেকে ফিরে ঋতুপর্ণা বলেছিলো ওদের সুযোগ-সুবিধা দিলে দেশকে আরো ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে। আসলেই ওদেরকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। ওরা পারবে।
জাগো নিউজ: নারী ফুটবলে এই যে সাফল্য আসছে। তাতে বাংলাদেশকে তো এখন অনেকেই সমীহ করবে। কি বলেন?
তাবিথ আউয়াল: ঠিক। প্রতিটি দেশকে দেখাচ্ছি, আমরা (বাংলাদেশ) এখন আর আন্ডারডগ নই।
জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।
তাবিথ আউয়াল: আপনাকেও ধন্যবাদ।